শিতাংশু গুহ


ভিডিও দেখলাম, না পুরোটা দেখার মত নয়, দেখা যায়না। মধ্যযুগীয় বর্বরতা, ভারী পাথর মেরে কাউকে হত্যা করা। নির্মম, নিষ্ঠূর। কিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, বাংলাদেশে সবই সম্ভব। আওয়ামী লীগ আমলে আমরা দর্জি বিশ্বজিৎ হত্যা দেখেছিলাম। বিশ্বজিৎ বলেছিলো, আমি হিন্দু, বিএনপি না? এবার নিহত হাফিজ কি বলেছিলো জানিনা, তবে এ মৃত্যু বড়ই যন্ত্রণার। ৯ই জুলাই মিটফোর্টে ব্যবসায়ী হাফিজকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যা করেছে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আবার সেই মব ভায়লেন্স। যুবদল রজব আলী পিন্টু ও সাবাহ করিম লাকিকে এজন্যে বহিস্কার করেছে। আজকাল অনেক ঘটনায় বিএনপি’র নাম আসছে, এটিও কি মেটিকুল্যাস প্ল্যান?  

বুঝলাম, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, যদি তাই হয়, তাহলে ড. ইউনুস স্বৈরাচারের বাপ। শেখ হাসিনা’র আমলে ১৬ বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছিলো, ড. ইউনুস’র আমলে ১০মাসে ২০বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন, এটি রেকর্ড। শেখ হাসিনা দেশান্তরী, ড. ইউনূসের শেষ জীবনটা জেলে কাটবে কিনা কেজানে? দেশে যেভাবে হত্যা, ধর্ষণ চলছে তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। মব ভায়োলেন্সকে এঁরা ‘মব জাষ্টিস’ বলে বৈধতা দিচ্ছে। সেনাবাহিনী বারবার বলছে, ‘মব’ সহ্য করা হবেনা, কিন্তু ওয়াকারুজ্জামানের অসীম ধৈর্য্য, তিনি নীরবে সবকিছু সহ্য করছেন। জেনারেল সাহেব, দেশ যেভাবে চলছে তাতে হয়তো একদিন যাকে হেলিকপ্টারে করে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে আবার সসম্মানে প্লেনে করে দেশে আনতে হতে পারে?

ইয়াহিয়া থেকে ইউনুস। ইয়াহিয়ার আমলের সাথে ড. ইউনূসের আমলের বিস্তর মিল্? বাংলদেশে এখনকার সময়টা ১৯৭১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের অবস্থা, রাজাকার, পাকিস্তানীরা হত্যা-ধর্ষণ-অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলো। টার্গেট করে হিন্দু ও আওয়ামীল লীগ হত্যা করছিলো। ভুলে গেলে চলবে না, এরপর কিন্তু ডিসেম্বর এসেছিলো। এবারো যে ডিসেম্বর আসবে না তা কি কেউ বলতে পারে? তেমন কিছু ঘটলে, ভারত আকাশ পথটা কিছু সময়ের জন্যে বন্ধ করে দিলে পালাবার পথও থাকবে না? একটি সাবমেরিন অবশ্য আছে, সেটি রেডী রাইখেন? তাও সমস্যা আছে, ভারতীয় নৌবাহিনী না চাইলে পালাতে পারবেন না? তাই মোদিকে ‘হাড়িভাঙ্গা আম’ পাঠিয়ে পালানোর রাস্তাটা অন্তত: খোলা রাখবেন।

ঐক্য পরিষদ প্রেস-কনফারেন্স করে বলেছে, সংখ্যালঘুর ওপর ৩৩০ দিনে ২৫০০ সহিংস ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৭টি ঘটনা ঘটেছে। অস্বীকার করতে চান, করেন। তবে এও সত্য, ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়না’। জবাব দিতে হবে বৈকি। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত গ্রেফতার হয়েছেন। বাঁশখালীর পল্লী চিকিৎসক প্রবীর চৌধুরী এবং সিলেটের রশিদপুরে চা-শ্রমিক রামজিৎ দাস গ্রেফতার হয়েছেন ধর্ম-অবমাননার অভিযোগে। প্রথম আলোর মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আপনার ধর্ম উপদেষ্টা বলেছেন, ড. ইউনূসের দাঁড়ি রাখা উচিত। ক্ষমতায় থাকার জন্যে দাঁড়ি রাখতে আপনার আপত্তি থাকার কথা নয়?

ভারতের রাষ্ট্রপতি আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, একটি দেশ ধ্বংস করতে পরমানু লাগেনা, লাগে কিছু অসভ্য, বর্বর, মূর্খ, সন্ত্রাসী হিংস্র জন্তু। ড. ইউনুস, এরাই তো আপনার শক্তি। শেষ বয়সে দেশকে ধ্বংস করতে আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন? ভুট্রো বলেছিলো, বাঙ্গালীরা কালো, কুৎসিত, দেখতে ইতর, চিন্তায় রুচিহীন, স্বভাবে শুয়র- সেই পাকিস্তানের লেজুড় বৃত্তি করছেন? যতই লাফালাফি করেন, মোল্লারা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না, ওরা বাহাত্তরের মত আবার গর্তে ঢুকবে। মালয়েশিয়া ৩৬ জন বাংলাদেশীকে জঙ্গী-সম্পৃক্ততার কারণে আটক করেছে, এদের কাউকে কাউকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিরা জঙ্গী নয়? এটিও ইউনুস ম্যাজিক, মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসতে আসতে জঙ্গীরা সব সুবোধ বালক হয়ে গেলো? কি চমৎকার, তাইনা?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।