গাজনা ইউনিয়নে আলাল শেখ ওরফে আলাউদ্দিনের ত্রাসের রাজত্ব
বিএনপির পদ দখলের অপচেষ্টা ঘিরে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন আলাল শেখ ওরফে আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি—এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক সময়ের আলোচিত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ছিনতাই, প্রকল্প চুরি, এবং দখলবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, তিনি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানের স্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে আইনের আওতার বাইরে থেকে এলাকায় একক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন গাজনা ইউনিয়নের জনজীবনে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামার এবং বেসরকারি প্রকল্পে নিয়মিত চাঁদা আদায় ও চুরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমান সরকারবিরোধী পরিবেশে রাজনৈতিক পালাবদলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি এখন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে গাজনা ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক পদ দখলের পরিকল্পনায় নেমেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, “আলাল শেখ জীবনের অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম করেছেন। এখন রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি বিএনপির ঘাঁটিতে ঢুকে পড়তে চাইছেন। এই পদক্ষেপ দলীয়ভাবে আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে।”
তারা আরও বলেন, “দলের দুর্দিনে যারা মাঠে ছিল, জেল-জুলুম সহ্য করেছে—আজ তাদের না রেখেই একজন বিতর্কিত ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিকে পদ দেওয়া মানে রাজনীতিকে কলুষিত করা।”
স্থানীয় সচেতন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি আলাল শেখের মতো ব্যক্তি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পান, তাহলে এই এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, আলাল শেখের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা থাকলেও তার কোনো তদন্ত কার্যকর হয়নি। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মধুখালী থানার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আলাল শেখের বিরুদ্ধে অতীতে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, কিছু মামলা এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে রাজনৈতিক চাপ ও সাক্ষী সংকটের কারণে অনেক মামলাই ঝুলে আছে।”
এদিকে আলাল শেখ ওরফে আলাউদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিএনপির স্থানীয় কোনো নেতার পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন, বিষয়টি তারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবগত করবেন।
এই পুরো ঘটনা বর্তমানে গাজনা ইউনিয়নে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। জনসাধারণ থেকে শুরু করে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, অপরাধীদের দলীয় রাজনীতিতে প্রবেশ রোধ করতে না পারলে তা ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি করবে।
তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড ও মধুখালী উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, আলাল শেখের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ ও মামলা যথাযথভাবে তদন্ত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি গাজনা ইউনিয়নে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
(ডিসি/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২৫)