দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের মধুখালীতে যৌথবাহিনীর সফল অভিযানে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও আন্তর্জাতিক অর্থপাচার চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। ফরিদপুর সেনা ক্যাম্প ও পুলিশের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান দেশের অন্যতম বড় ডিজিটাল প্রতারণা চক্রকে ধরাশায়ী করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গোপন তথ্য ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চালানো এ অভিযানে উঠে আসে ভয়ংকর এক প্রতারণা নেটওয়ার্কের চিত্র। অভিযোগ ছিল—বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ভুয়া কাস্টমার কেয়ার পরিচয়ে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য (অ্যাকাউন্ট, পিন, ওটিপি) নিয়ে প্রতারকরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অর্থের মূল গন্তব্য ছিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডোমাইন ইউনিয়ন।

১৫ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে তিন দিনব্যাপী প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারি ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে চক্রটির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। তদন্তে জানা যায়, প্রতারকরা অর্থ সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়া ও বেটিং সাইটে খাটাত এবং পরে তার একটি বড় অংশ পাচার করত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। অবশিষ্ট অর্থ চক্রের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যেত।

আজ সোমবার ভোরে শুরু হওয়া অভিযানে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মধুখালীর ডোমাইন বাজার এলাকায় অভিযান সফলভাবে শেষ হয়। এতে আটক হন চক্রের মূলহোতা ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মো. কামরুল মিয়া (৪০) এবং তার চার সহযোগী—অমরেশ বিশ্বাস (৩০), সোহান মালিক (২৪), হাফিজুর রহমান (৪২) ও শেখ শাকিল আহমেদ (২৬)।

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০৬ পিস ইয়াবা, ৪২টি গ্রামীণফোন সিম এবং ১০টি মোবাইল ফোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা জানায়, ভুয়া কাস্টমার কেয়ার কলের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল এবং প্রতারিত অর্থ জুয়ার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করত। অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখতে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পূর্ব-নিবন্ধিত সিম সংগ্রহ করত।

এই চক্র শুধু ফরিদপুরে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে তাদের সক্রিয়তা ছিল। এটি দেশের ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার জন্য এক মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আটককৃতদের মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সাইবার অপরাধ দমন আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সেনা সূত্র জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনী অবৈধ অর্থপাচার, মাদক ও প্রতারণার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ দমনে জনগণকে আরও সচেতন হতে ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২৫)