মাদারীপুরের বিভিন্ন খাল-বিলে নিজ উদ্যোগে মাছের পোনা ছাড়েন মিলন মুন্সি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : গত তিন বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন খাল-বিলে মাছের পোনা ছাড়েন মাদারীপুরের মিলন মুন্সি নামের এক যুবক। কখনও নিজের টাকায় আবার কখনও অনুদানের টাকায় বিভিন্ন বাজার থেকে মাছের পোনা কিনে এনে তা গ্রামের খাল-বিলে ছাড়েন। দেশিয় মাছ রক্ষার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগেই এই কাজ করছেন।
আজ শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার এওজ এলাকার বিভিন্ন বিলে ৪০ কেজি মাছের পোনা ছাড়েন। জিজীবিষা (বেঁচে থাকার ইচ্ছা) নামের মিলন মুন্সির প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সংগঠনের ব্যানারে এই মাছগুলো ছাড়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফয়সাল তালুকদার, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী সাজ্জাদ হোসেন, দুধখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওর্য়াডের মেম্বর আলিম হোসেন, রাস্তি ইউনিয়নের মহিলা মেম্বর মর্জিনা বেগম, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠক জিজীবিষা (বেঁচে থাকার ইচ্ছা) এর প্রতিষ্ঠাতা মিলন মুন্সি, স্বেচ্ছাসেবক নোমান হোসেন, দিদার মোল্যা, ইরমান খান, হারুণ সরদার, সরদার মহিবুল্লাহ, পলাশ প্রমুখ।
জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পূর্ব বাহাদুরপুর গ্রামের হানিফ মুন্সি ও সামসুন্নাহার বেগমের ছেলে মিলন মুন্সি (৩২)। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি মেঝ। তিন ভাই ইতালী থাকেন। তাই বাবা, মা, বোন, স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের বাগেরপাড় এলাকায় থাকেন। বর্তমানে তিনি শরীয়তপুর জেলার ঘোষাইরহাটে নির্বাচন অফিসে চাকুরী করছেন।
চাকুরীর পাশাপাশি অবসর সময়ে তিনি এই কাজগুলো করেন। গত তিন বছর ধরে তিনি মাদারীপুরের গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন খাল বিলে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। যাতে করে মাছগুলো মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে পাশাপাশি দেশিয় মাছগুলোর বংশ বিস্তার লাভ করতে পারে। এতে করে বিলুপ্তি হবার পথে অনেক মাছ রক্ষা পাবেন। সেই চিন্তা থেকে গত তিন বছরে তিনি শত কেজি মাছ মাদারীপুরের বিভিন্ন খালে অবমুক্ত করেছেন। মাছগুলোর মধ্যে আছে রুই, কাতল, কালো বাউস, পাঙ্গাস, সিলভার কার্প, কৈ, শিং, টেংরা ইত্যাদি।
এছাড়াও জিজীবিষা (বেঁচে থাকার ইচ্ছা) নামে একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন মিলন মুন্সি। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তিনি গত পাচ বছর ধরে তালের আঠি, গাছের চারা ও বীজ রোপণ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ত্রিভাগী থেকে বলষা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের তিথিরপাড় থেকে পশ্চিম বাহাদুরপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা, ধুরাইল ইউনিয়নের হবিগঞ্জ ব্রীজ থেকে চাষার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা, নতুন ব্রীজ এলাকা, খোয়াজপুর, রাস্তিসহ গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় ৩০ হাজারেরও বেশি তালের আঠি ও তিন হাজারের বেশি গাছের চারা ও কয়েক হাজার আম, কাঠাল, অর্জুন, জামের বীজ লাগিয়েছেন।
মিলন মুন্সি বলেন, চাকুরীর পাশাপাশি অবসর সময়ে মাদারীপুরের বিভিন্ন খাল-বিলে মাছের পোনা অবমুক্ত করি। মুলত দেশিয় মাছ রক্ষার জন্যই এই কাজগুলো করছি। দিনে দিনে দেশিয় মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। তা রক্ষার জন্যই অবসর সময়টাকে কাজে লাগচ্ছি। তবে বিভিন্ন খাল বিল থেকে অবৈধভাবে চায়না জাল দিয়ে দেশিয় মাছ ধরা হচ্ছে। এতে করেও দেশিয় মাছ ও জলজ প্রাণীর বিপন্নের পথে। এগুলো বন্ধ না হলে এক সময় দেশিয় মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাবে।
স্থানীয় সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন খাল-বিল থেকে দেশিয় মাছ হারিয়ে গেছে বসেছে। ইতিমধ্যে অনেক মাছ বিলুপ্তিও হয়ে গেছে। তাই মিলন মুন্সির মতো আরো যুবকরা যদি এই কাজে এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রকৃতিভাবেই দেশিয় মাছগুলো বড় হবে আর বংশ বিস্তার করতে পারবে।
দুধখালী ইউনিয়নের ২নং ওর্য়াডের মেম্বর আলিম হোসেন বলেন, মিলন মুন্সির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বর্তমান সময়ে নিজ উদ্যোগে এই ধরণের কাজ খুব একটা চোখে পড়ে না। আশা করছি তাকে দেখে আরো যুবক উৎসাহ পাবে।
(এএসএ/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২৫)