স্টাফ রিপোর্টার : ১৯৮০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিমাণ বেড়েছে ৭ গুণ। ভূমির তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ জলাধার। এছাড়া, ঢাকার মাত্র ৬টি থানা ন্যূনতম জলাধার মান পূরণ করেতে পেরেছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত নতুন গবেষণা ‘প্রকৃতিবিহীন ঢাকা? প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক টেকসই নগর ভাবনার পুনর্বিচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে।

রবিবার (২৭ জুলাই) ঢাকাস্থ হলিডে ইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র ও নগর তাপমাত্রা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি এ গবেষণায় ঢাকার পরিবেশগত অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়। ঢাকা অব্যবস্থাপনায় ভরা, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নই এই সংকটের মূল কারণ বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণাটির তথ্য উপস্থাপন করে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা সহযোগী সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার অর্ধেক গাছ বিলুপ্ত হয়েছে। সবুজ আচ্ছাদন কমে এসেছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশে। শহরের বেশিরভাগ এলাকাই মাথাপিছু ৯ বর্গমিটার সবুজ জায়গার আন্তর্জাতিক মান অর্জনে ব্যর্থ। ‘ট্রি-ডেজার্ট’ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী- যেখানে গাছ প্রায় নেই বললেই চলে।

ঢাকায় জলাধারের তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, ১৯৮০ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার ৬০ শতাংশ জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে- সর্বমোট জলাধার এখন শহরের মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকাজুড়ে। এছাড়া ঢাকায় প্রায় জলশূন্য এলাকা এখন হলো সূত্রাপুর, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল। ঢাকায় ৫০ টির মধ্যে কেবল ৬টি থানা ন্যূনতম জলাধার মান পূরণ করতে পারছে।

গবেষণায় শহরের ভূ-তাপমাত্রা বেড়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, শহুরের ভূ-তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে ঢাকার কোনো এলাকাতেই তাপমাত্রা ৩০ডিগ্রি সেলসিয়াস -এর নিচে নেই। ঢাকায় গরমের হটস্পট শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম- সব এলাকায়ই তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি এর ওপরে।

ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে ৭ গুণ, যা এখন শহরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছে। ৯০ শতাংশ বা তার বেশি কংক্রিট গঠিত অঞ্চল হলো বংশাল, সূত্রাপুর, কলাবাগান, হাজারীবাগ, মিরপুর, রামপুরায়। এছাড়া ৫০টি থানার মধ্যে ৩৭টি এরইমধ্যেই নিরাপদ নির্মাণসীমা অতিক্রম করেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

তারা বলেন, ঢাকার উত্তরখান ও তুরাগ শহরের প্রান্তিক অঞ্চল হওয়ায় এখনও কিছুটা সবুজ অঞ্চল ও জলাধার ধরে রেখেছে। তবে ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালীসহ ঘনবসতিপূর্ণ কেন্দ্রীয় এলাকাগুলো প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন।

গবেষণাটির পরিচালক ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান বলেন, উন্নয়নের নামে আমাদের ঢাকার প্রকৃতি প্রায় ধ্বংস। সমুদ্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার প্রজাতির প্রাণী। আমাদের শহরের দূষণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুদূষণের কারনে ঢাকায় কী পরিমাণ ইনহেলার বিক্রি বেড়েছে এটা খেয়াল করে দেখুন।

তিনি বলেন, দিল্লি ও জাকার্তা শহর ঢাকার চেয়ে এগিয়ে। শুধু করাচি ঢাকার নিচে- আর আমরাও সে পথেই এগিয়ে চলেছি। ঢাকাকে করাচির পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হলে, সিঙ্গাপুরের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক মডেল গ্রহণ করতে হবে। তবে সেটি স্থানীয় জ্ঞান ও সাম্যতার ভিত্তিতে। প্রকৃতিকে ফিরে পাওয়ার লড়াই এখন শুধুই সবুজ সাজসজ্জা নয়, এটি একটি মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন- যেখানে প্রকৃতির অধিকারই শহর টিকে থাকার মূল ভিত্তি হতে হবে। রাষ্ট্র ও জনগণকে প্রকৃতির অভিভাবক হতে হবে, কর্তৃত্ববাদী নয়।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৭, ২০২৫)