আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : ছিলেন সহকারি মৌলভী। সেখান থেকে জাল সনদে একই মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। এরপর প্রতারনার মাধ্যমে টানা ২৯ বছর ধরে প্রভাবশালী আওয়ামী ওলামা লীগ নেতা মোহাম্মদ আবু বকর মিয়ার বিরুদ্ধে বেতন ভাতা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি এলাকায় চাউর হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হস্তিশুন্ড ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার।

স্থানীয় একাধিক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে হস্তিশুন্ড ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে যোগদান করেন আবু বকর মিয়া। পরবর্তীতে মাদ্রাসাটি ফাজিল মাদ্রাসায় উন্নীত হলে ১৯৯৬ সালে আরবী প্রভাষক হিসেবে তিনি (আবু বকর মিয়া) নিয়োগ পান। এরপর থেকে অদ্যবধি ওই মাদ্রাসায় তিনি চাকরি করে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষানুরাগী মো. ফারুক হোসেন বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগবিধি ১৯৮২ ও ১৯৯৫ সালের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নিয়োগ যোগ্যতার পরিপত্রে যেকোন ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক নিয়োগে কামিল দ্বিতীয় শ্রেনীসহ সকল পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেনী/বিভাগ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ আবু বকরের কোন সনদেই প্রথম বা দ্বিতীয় বিভাগ নেই।

তার (আবু বকর) শিক্ষা সনদে দেখা গেছে, ১৯৭৯ সালে হস্তিশুন্ড ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে তিনি নীল ডিভিশনে দাখিল পাশ করেছেন। ১৯৮১ সালে একই মাদ্রাসা থেকে তৃতীয় বিভাগে আলীম পাশ এবং ১৯৮৩ সালে চরকাউয়া আহমাদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে তৃতীয় বিভাগ (থার্ড ডিভিশন) নিয়ে ফাজিল পাশ করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সনদ জাল-জালিয়াতি (টেম্পারিং) আর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালাকে উপেক্ষা করে দীর্ঘবছর যাবত প্রভাষক আবু বকর মিয়া চাকরি করে আসছেন। তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এনিয়ে কয়েক বছর পূর্বে স্থানীয় ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তবে সে (আবু বকর) তৎকালীন সময়ে আওয়ামী ওলামা লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ক্ষমতার দাপটের কারণে তাকে কোন শাস্তির মুখে পরতে হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক মোহাম্মদ আবু বকরের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সনদ জালিয়াতির অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে দেখা করার প্রস্তাব দেন।

এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২৫)