বিনোদন ডেস্ক : বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক সোহেল রানা। চলচ্চিত্র অঙ্গনের বাইরে তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় কিংবা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে অনুতপ্ত বরেণ্য এ অভিনেতা। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিনেতা।

২৭ জুলাই রবিবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে বেশ কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করেছেন সোহেল রানা। একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।’

এদিন দেওয়া আরেকটি পোস্টে এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কষ্ট করে টাকা জমা দেওয়ার জন্য। বসার জায়গা নেই। ২৫ জনের বসার জায়গা হলে, ১০০ জন রোগী দাঁড়িয়ে আছে। সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বা স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনরকম দাম সম্মান কিছুই নেই। কেবিন ভাড়া যা ছিল, এক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বা মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ড কোন কাজে আসে, বুঝি না। কোনও অভিযোগ নেই, শুধু একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস!’

সোহেল রানা অসুস্থ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে নির্মাতা মাশরুর পারভেজ। তিনি বলেন, ‘করোনার পর থেকেই বাবার শরীর প্রায়ই খারাপ হয়ে যায়। মূলত ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তাই গত সপ্তাহে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। আমার মাসহ আমরা সবাই তার টেক কেয়ার করছি। সবাই দোয়া করবেন।’

শিক্ষাজীবনে একজন তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন মাসুদ পারভেজ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকায় হলেও পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলায়।

শুরুতে প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন তিনি। তার আসল নাম মাসুদ পারভেজ হলেও ‘সোহেল রানা’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। মূলত চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সোহেল রানা নাম ধারণ করেছিলেন তিনি।

১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ ফিল্মস নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়েন তিনি। অন্তত ৩০টি চলচ্চিত্র তিনি প্রযোজনা করেছেন এই ব্যানারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এর প্রযোজক ছিলেন তিনি। কিন্তু পরে নায়ক খ্যাতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তার প্রযোজক পরিচয়টি।

সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই সিনেমার মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।

‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’-এভাবে একের পর এক তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা। ‘লালু ভুলু’ (১৯৮৩), ‘অজান্তে’ (১৯৯৬), ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩) তিনটি চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন সোহেল রানা। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসরে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা-অভিনেতা।

১৯৯০ সালে ডা. জিনাত পারভেজকে বিয়ে করেন সোহেল রানা। তাদের একমাত্র ছেলে মাশরুর পারভেজ জীবরান। অভিনেতা মাসুম পারভেজ রুবেল তার ভাই।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৮, ২০২৫)