যাত্রী ছাউনি না থাকায় বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ী থেকে পাংশা যাচ্ছিলেন সালাম হোসেন নামে এক যাত্রী। হাতে তার ব্যবসায়ীক মালপত্র। এসময় কথা হয় তার সাথে। জানালেন, ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তাকে প্রায়ই পাংশা-রাজবাড়ী যাতায়াত করতে হয়। বেশির ভাগ সময় বাসেই যাতায়াত করেন। রাজবাড়ীতে যাত্রী ছাউনী না থাকায় তার মত যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। দাঁড়ানোর জায়গা না থাকায় রোদে পুড়তে হয়। বৃষ্টি হলে আশে পাশে কোনো দোকানে ঠাঁই নেন।
রাজবাড়ীর মুরগীর ফার্ম বাস স্ট্যান্ডে বাসযাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয় সব সময়। শুধু মুরগীর ফার্ম এলাকা নয়, জেলার মধ্যে শুধুুমাত্র গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড, গোয়ালন্দ মোড় এবং পাংশায় যাত্রী ছাউনী রয়েছে। তবে, গোয়ালন্দ ছাড়া অন্য দুটি ব্যবহারের অনুপোযোগী।
জানা গেছে, রাজবাড়ী থেকে অভ্যন্তরীণ পাঁচটি রুটে বাস চলাচল করে। এই রুট পাঁচটি হলো দৌলতদিয়া, ফরিদপুর, বালিয়াকান্দি, কুষ্টিয়া ও ধাওয়াপাড়া। এছাড়া ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, যশোর, মাগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার বাসও ছেড়ে যায়। রাজবাড়ী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি বাস টার্র্মিনাল নির্র্মাণ করা হলেও তা ব্যবহৃত হয়না শুরু থেকেই। শহরে মুরগীর ফার্ম নামক জায়গায় বাস স্ট্যান্ড রয়েছে। বড়পুল থেকেও যাত্রী ওঠানো নামানো হয়। রাজবাড়ী থেকে মাছপাড়া পর্যন্ত ১৪টি স্টপেজ রয়েছে। এর মধ্যে পাংশায় একটি যাত্রী ছাউনী রয়েছে। তবে বহুদিন ধরেই সেটি ব্যবহারের অনুপোযোগী। কালুখালীতে একটি যাত্রী ছাউনী ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন জেলা পরিষদের এক সদস্য সেটি রাতের আধারে ভেঙে ফেলেন। সেই যাত্রী ছাউনির পাশে আলিশান মার্কেট গড়ে তুলেছেন সেই জেলা পরিষদ সদস্য তারপর আর সেখানে যাত্রী ছাউনী হয়নি।
এছাড়া আর কোথাও যাত্রী ছাউনী নেই। রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দি পর্যন্ত পাঁচটি স্টপেজের একটিতেও যাত্রী ছাউনী নেই। রাজবাড়ী থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ছয়টি স্টপেজের শুধুমাত্র গোয়ালন্দ মোড়ে যাত্রী ছাউনী রয়েছে। সেটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হওয়ায় বহুদিন ধরেই পরিত্যক্ত। গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত পাঁচটি স্টপেজের মধ্যে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনী রয়েছে।
রাজবাড়ী মুরগী ফার্ম বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর ও দৌলতদিয়ামুখী বাসগুলো ছাড়ছে মুরগীর ফার্মের ঠিক সামনে থেকে। সেখানে কয়েকটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ছাড়াও বেশ কয়েকটি দোকানপাট রয়েছে। বাসের অপেক্ষমান যাত্রীরা কেউ দোকানে কেউ টিকিট কাউন্টারে বসে আছেন। কুষ্টিয়াগামী বাসগুলো ছাড়ছে পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে। সেখানে একটি ছোট টং দোকান রয়েছে। যাত্রীরা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বালিয়াকান্দিগামী বাস ছাড়ছে নতুন বাজারের সামনের রাস্তা থেকে। সেখানেও যাত্রীদের জটলা।
মুরগী ফার্ম বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আবুল কালাম জানান, পরিবার নিয়ে ফরিদপুর যাবেন। বাসের অপেক্ষায় আছেন। কোথাও বসার জায়গা নেই। তার স্ত্রী সন্তানকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে নিজে ঘোরাফেরা করছেন।
রাজবাড়ীর মুরগী ফার্ম বাস স্ট্যান্ডে দৌলতদিয়াা-কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী পদ্মা গড়াই বাসের টিকিট বিক্রি করেন ইউসুফ সরদার। তিনি জানান, তাদেরও বসার জায়গা নেই। একারণে একটি দোকানের সামনে বসেছেন টিকিট বিক্রি করতে। যাত্রী ছাউনী না থাকার কারণে যাত্রীদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। রোদের মধ্যে তারা বাস স্টপেজের আশে পাশে দোকানগুলোতে দাঁড়ান। বেশি লোক হয়ে গেলে দোকানদাররা তাদের সরে যেতে বলেন। বৃষ্টির দিন হলে ভোগান্তির শেষ থাকেনা।
পরিবহন শ্রমিক রেজাউল ইসলাম রূপু বলেন, মুরগীর ফার্ম এলাকায় আগে যাত্রী ছাউনী ছিল। সেটি ব্যবহারও করা হতো। যাত্রীরা সেখানে বিশ্রাম নিত। ফোর লেন সড়ক হওয়ার সময় যাত্রী ছাউনীটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর আর নির্মাণ করা হয়নি। এই বাসস্ট্যান্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, পাবনা, কুষ্টিয়া, বালিয়াকান্দি, দৌলতদিয়া, রাজশাহী, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এখানে একটি যাত্রী ছাউনী থাকা খুবই জরুরী।
রাজবাড়ী জেলা পরিবহন মালিক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সরকার বলেন, বিষয়টি তারা কখনও ভাবেননি। তবে, একটি বাস স্টপেজে যাত্রী ছাউনী থাকা খুবই দরকার। যাত্রী ছাউনী নির্মাণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজস খান জানান, জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রী ছাউনী নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
(একে/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২৫)