গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা স্বীকার করলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রথমবারের মতো গাজায় ‘বাস্তব দুর্ভিক্ষ’ চলছে বলে স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ‘এক বিন্দু খাবার’ আটকানো যাবে না- সবকিছু ঢুকতে দিতে হবে।
যুক্তরাজ্য সফরের সময় সোমবার (২৮ জুলাই) এক সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি- বিশেষ করে কিছু শিশুদের। ওদের দেখে বোঝা যায়, সেটা সত্যিকারের ক্ষুধা। এটা বানানো নয়, আমরা দেখছি এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই- এ কথা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, টেলিভিশনে যেটা দেখছি, তা দেখে বলা যায় না যে সেখানে দুর্ভিক্ষ নেই। শিশুদের দেখেই বোঝা যায় ওরা অভুক্ত।
ট্রাম্প আরও বলেন, আমরা টাকা দিচ্ছি, খাবার দিচ্ছি- তবে আমরা তো এখান থেকে করছি। আমি চাই, তিনি (নেতানিয়াহু) নিশ্চিত করুক যে খাবার পৌঁছাচ্ছে। খাবারের প্রতিটি কণা পৌঁছাতে হবে, এক বিন্দুও যেন আটকে না থাকে।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় কোনো ব্যারিয়ার ছাড়াই ‘ওয়াক-ইন ফুড সেন্টার’ চালু করা হবে, যেখানে সরাসরি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। তবে কীভাবে এগুলো পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
এদিকে, হামাসের হাতে এখনো আটক থাকা বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তবে তিনি ইসরায়েলকে কৌশল বদলানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
এই প্রথম গাজার মানবিক সংকট নিয়ে এতটা সরাসরি ও কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাঁর অবস্থানের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। গাজার ভেতরে দুর্ভিক্ষ ও শিশু মৃত্যুর যে ভয়াবহ চিত্র বিশ্বমাধ্যমে উঠে আসছে, তা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
স্কটল্যান্ডের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। স্টারমার বলেন, গাজায় যা হচ্ছে, তা ‘একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ও সেখানে জরুরি যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন রয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, স্টারমার ব্যক্তিগতভাবে গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের ওপর চাপ দিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গাজা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক আহ্বান করেছেন। সেখানে ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে।
ট্রাম্পের স্কটল্যান্ড সফর ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা। তার আবেরডিনশায়ার গলফ কোর্সের পাশে প্রায় ১০০ জন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের মতে, গাজায় যা হচ্ছে তা সহ্য করার মতো নয় ও ট্রাম্পের আগমনে তারা অপমানিত বোধ করছেন।
তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
(ওএস/এএস/জুলাই ২৯, ২০২৫)