হুমকির মুখে বাড়ি ছাড়া তিন ভাই
শ্রীমঙ্গলে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ

আল-আমিন মিয়া, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রাম জাম্বুরাছড়ায় চাচাতো ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন তিন দিনমজুর ভাই। প্রাণনাশের হুমকি ও বসতবাড়ি দখলের কারণে তারা পরিবারসহ দীর্ঘ দুই মাস ধরে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহত তিন ভাই—আব্দুস সালাম, আব্দুল মতিন ও আব্দুর রহিম—এখনও নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপনে রয়েছেন। এ ঘটনায় একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানা গেছে।
আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, “আমাদের চাচাতো ভাই মাসুক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বসতবাড়ি দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে তার পালিতপুত্র সুমন মিয়া আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে গত ২১ মে স্থানীয়ভাবে বিচার-শালিস হয়। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ২৫ মে মাসুক মিয়া ও তার সহযোগীরা আমাদের তিন ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।”
আহত অবস্থায় তাদের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরতে গেলে মাসুক মিয়া ও তার লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে জানান তারা।
আব্দুস সালামের স্ত্রী কামারুন নেছা বলেন, “হামলার পর আমাদের বসতবাড়ি ও ফলদ বাগান দখল করে নেয় মাসুকের লোকজন। বাড়ি ফিরতে চাইলে প্রাণে মারার হুমকি দেয় তারা। আমার স্বামী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আমরা এখনো গোপনে রয়েছি।”
সরজমিনে জাম্বুরাছড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন ভাইয়ের বাড়িগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে পরিবারগুলো বাড়িতে ফিরতে পারেনি।
গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি মো. নুরুল আমিন বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত ২১ মে এক শালিস বৈঠক থেকে। পরে ২৫ মে তিন ভাইয়ের উপর নির্মম হামলা হয়। আমরা গ্রামের মুরব্বিরা মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। মাসুক মিয়া কারো কথাই শোনে না।”
অভিযুক্ত মাসুক মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন রিসিভ হয়নি। তার ছেলে আল-আমীন বলেন, “আমরা কারো উপর হামলা করিনি, বরং তারাই আমাদের উপর হামলা করেছে। আমরা থানায় মামলা করেছি, তারা আদালতে মামলা করেছে। কোর্টে ফয়সালাই যথাযথ হবে।”
৪ নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন আরাফাত রবিন বলেন, “তিন ভাইয়ের একজনের চোখ অন্ধ হয়েছে, একজনের হাত কাটা পড়েছে, আরেকজনের মাথায় আঘাত। এটি গুরুতর অপরাধ। মাসুক মিয়া কারো কথা শুনছেন না। বিষয়টি আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে। তবে আমি শুনেছি, তাদের বাড়ি ফিরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
এ ঘটনায় থানায় ও আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তবে পরিবারগুলো এখনো নিজ ঘরে ফিরতে না পারায় গ্রামে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
(এএ/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২৫)