রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে রাতের অন্ধকারে একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে মন্দিরটিতে থাকা বেশকয়েকটি প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোনো প্রতিমার হাত ভাঙেছে, কোনোটির পা ভেঙেছে, কোনটির দাঁত ভেঙেছে, কোনোটির চুল ছিঁড়ে ফেলেছেে, কোনটির শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাত ৮ থেকে বুধবার (৩০ জুলাই) ভোর ৫ টার মধ্যে যে কোনো সময় কানাইপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এ সার্বজনীন মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে, কে বা কারা এই মন্দিরটির প্রতিমাগুলো ভেঙেছেন, প্রাথমিকভাবে তা জানা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) ফরিদপুর পুলিশ প্রশাসন সহ স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে, ফরিদপুর সদরের ৯ নং কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'সকালে স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছি। আমাদের ইউনিয়নটি একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এলাকা। এখানে এমন একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারি না।' এছাড়া সার্বজনীন এ মন্দির ভাঙচুরের এমন নেক্কারজনক ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান আলতাফ হুসাইন।'

ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ কামাল হোসেন এ ব্যাপারে জানান, 'আমি সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। এসে দেখি কে বা কারা খাসকান্দি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের ভাঙচুর চালিয়ে চার থেকে থেকে পাঁচটি প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে রেখে গেছে। হাত-পা-দাঁত ভাঙা থেকে শুরু করে কয়েকটি প্রতিমার চুলও ছিঁড়ে ফেলেছে। এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।' কামাল মেম্বার আরও বলেন, মন্দিরটি ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি এই বারোয়ারি মন্দিরটি মেরামত সহ সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের (গণমাধ্যম কর্মীদের) মাধ্যমে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।'

এ বিষয়ে খাসকান্দি সার্বজনীন মন্দির কমিটির সভাপতি বাসুদেব বিশ্বাস ঘটাস্থল থেকেউত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, সকালে হাটতে বের হয়ে দেখি মন্দিরটির কয়েকটির হাত ভাঙা, কয়েটির পা ভাঙা, চুল ছেঁড়া সহ প্রতিমাগুলোর বিভিন্ন ভাঙা অংশ মন্দিরের সামনে রেখে গেছেন। মন্দিরটি প্রয়োজনীয় সুরক্ষিত ছিলোনা দাবি করে বাসুদেব বিশ্বাস আরও জানান, আশেপাশে কোনো বাড়ী না থাকায় সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো সম্ভব হয়নি। তবে, মন্দিরটি সুরক্ষিত রাখতে ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করলেও সেখান থেকে কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি বলেও জানান ওই সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি বাসুদেব বিশ্বাস।

ঘটনাস্থল থেকে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল লতিফউত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, কে বা কারা খাসকান্দি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরটি ভেঙেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।' এছাড়া, মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ বলেও জানান এসআই আব্দুল লতিফ।

উল্লেখ্য, খাসকান্দি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরটি এলাকায় সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি সার্বজনীন পুজা মন্দির। এই মন্দিরে প্রতি বছর দুর্গা পুজা উৎসবের আয়োজনের পাশাপাশি সারা বছরই এই মন্দিরটিতে বিভিন্ন পুজা অর্চনা করে থাকেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনসাধারণ।

(আরআর/এএস/জুলাই ৩০, ২০২৫)