প্রক্টর ও হল প্রভোস্টসহ আহত ১৫
গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
.jpeg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘নবনীতক-৯’-এর সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেওয়া নিয়ে দু’ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রক্টর ও হল প্রভোস্টসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শেখ রাসেল ও বিজয় দিবস হল।
বুধবার দিবাগত রাত ১টারি দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস হলে দু’ বিভাগের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের শুরু হয়। পরে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, বিজয় দিবস হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম ও শাহিনুর রহমান এবং ইতিহাস বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। মারাত্মক আহতাবস্থায় ৭ জনকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আনুমানিক ১টার দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই-সি) বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা নিয়ে বাকবিতণ্ডার শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা, স্ট্যাম্প, ব্যাট, হকিস্টিক, দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তখন ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের নেতৃত্বে শেখ রাসেল হলে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। অন্য পক্ষ পাল্টা হামলা চালিয়ে এএসভিএম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের কক্ষের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, “একাডেমিক ভবনে প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়, আমাদের বিভাগের ২-৩ জন জুনিয়র সামনে চেয়ার নিয়ে বসতে যায়। তখন আমাদের অন্য জুনিয়ররা বলে ‘ভাই, আপনি এমনি সামনে বসলে তো আমরা কিছু দেখতে পারি না।’ এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। তবে তখনই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।
এরপর আমরা সবাই রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে ৪০-৫০ জন ছেলে আমাদের ধাওয়া দেয়। আমরা দৌড়ে বিজয় দিবস হলে আশ্রয় নিই। কিন্তু ওরা বাঁশ ও কাঠ হাতে নিয়ে বিজয় দিবস হলে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের বিভাগের ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মার খাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে হল থেকে বের হয় এবং শেখ রাসেল হলের দিকে যায়।”
এ ব্যাপারে প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজীব বলেন," হল প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা এধরনের কাজের সাথে জড়িত আছে তাদেরকে প্রশাসন সবাইকে সবোচ্চ শাস্তি যেটা আছে সেটা নিশ্চিত করবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজকে মিটিং করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে, সেখানে যেহেতু সিসিটিভি ফুটেজ আছে, সবকিছু আছে, আইউকনেস আছে। তাই এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু না। তদন্তের মাধ্যমে যাদের নাম উঠে আসবে সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে, এটা ভাইস চ্যান্সেলরের ম্যাসেজ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত শিক্ষা সমাপনী কনসার্টটি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ‘নবনীতক-৯’ শিরোনামে আয়োজিত শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি আজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
(টিবি/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২৫)