কালীগঞ্জ প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাতের প্রভাব পড়েছে পাটচাষে। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পাটচাষীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিল ও নিচু জমিগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় পাট পচানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পানি সঙ্কটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে যেখানে পাট পচাতে হিমশিম খেতে হয়েছে, সেখানে এবার পর্যাপ্ত পানির প্রাপ্যতা পাট পচানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। এতে পাটের আঁশ সহজে ও মানসম্মতভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান অনেক চাষী। তাদের মতে, এবারের পাটের রং ও আঁশের মান বিগত বছরের তুলনায় অনেক ভালো।

তবে সুবিধার পাশাপাশি কৃষকরা কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। তাই পাটগাছ নির্ধারিত সময়ের আগেই কাটতে হচ্ছে, যার ফলে গাছ পুরোপুরি পরিপক্ক হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। অন্যদিকে মেঘলা ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে আঁশ শুকাতে বেগ পেতে হচ্ছে। যদি এ অবস্থা আরো কিছুদিন চলতে থাকে তবে পাট শুকিয়ে বাজারজাতকরণে বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

কালীগঞ্জ উপজেলার আগমুন্দিয়া গ্রামের পাটচাষী তাজউদ্দীন বলেন, “আমরা সুবিধা-অসুবিধা দুইটাই পাচ্ছি। জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাট কেটে পচানোর জায়গায় আনতে খরচ বেশি হচ্ছে। শ্রমিকও বেশি লাগছে।”

কালীগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। প্রধানত চাপরাইল, বরেবাজার, আগমুন্দিয়া, কেলা-কালা, বাবরা ও দুলাল মুন্দিয়া এলাকাগুলোতে চাষের বিস্তার ঘটেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, “ফলন কিছুটা কম হবে, তবে পাটের মান এ বছর অনেক ভালো।”

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে পাটের দাম প্রতি মণ ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। যেখানে গতবছর দাম ছিল ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে। পাইকারি ক্রেতারা ধারণা করছেন, চাহিদা বাড়ার কারণে এই দাম আরো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

কালীগঞ্জ ভূষণ হাই স্কুল রোড সংলগ্ন “আপন এন্টারপ্রাইজ”এর ম্যানেজার শাকিল আহমেদ জানান, “এবার পাটের রং ও আঁশের মান ভালো। এজন্য খুলনা, যশোর, নড়াইল ও ফরিদপুরের জুটমিলগুলো আগ্রহ নি কালীগঞ্জ এলাকার পাট কিনছে।”

পাট বিপণন নিয়েও কিছু অভিযোগ উঠেছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পাইকাররা প্রতি মণে ২ থেকে ৩ কেজি বেশি ওজন ধরে দর নির্ধারণ করছেন। তারা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ পাট আংশিক ভেজা অবস্থায় থাকায় এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, চলতি মৌসুমে পাটচাষে যেমন রয়েছে আশাবাদ, তেমনই রয়েছে চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বিষয়, এই বৈরী আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত কৃষকদের জন্য সুফল বয়ে আনে, না কুফল -তা সময়ই বলে দেবে।

(এসএস/এসপি/আগস্ট ০৩, ২০২৫)