রাজন্য রুহানি, জামালপুর : দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায় জামালপুর শহরের শেখেরভিটা রেলক্রসিং (উত্তর) এলাকার লোকজন। সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় এ এলাকাটি। ঘরে ঘরে ওঠে পানি। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নেই যাতায়াতের সড়ক। রেললাইনের পাড় ধরেই লোকজনের চলাচল।

এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটির লাইন থাকলেও নেই কোনো সড়কবাতি। রাতে নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার। পৌরবাসিন্দা হয়েও যেন মধ্যযুগে বসবাস করেন এ এলাকার লোকজন। পৌর নাগরিকের কোনো সুযোগ-সুবিধাই পায় না তারা। এ এলাকাটি পৌরশহরের যেন বাতির নিচে অন্ধকারের চাক্ষুষ উপমা। পৌরনাগরিক হয়েও এই এলাকার প্রতি বৈষম্য দূর করে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তা নির্মাণ ও সড়কবাতির সংযোজনের দাবি জানিয়েছেন পানিবন্দী এলাকাবাসী।

সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে পানিবন্দী এলাকাবাসীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এলাকাবাসী এ দাবি জানায়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম, ওই এলাকার বাসিন্দা সংগীতশিল্পী এম আর মুন্না, জোসনা আক্তার, আতর আলী প্রমুখ।

মানববন্ধনে জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, আজকে অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এটি শেখেরভিটার একটি জনবহুল ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তারা পৌরকর দেয় এবং পৌরসভার সমস্ত দাবি পূরণ করার পরেও দিনের পর দিন তারা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাচ্ছেন। প্রতিদিন এই ঘরবাড়িগুলোতে সাপ থেকে শুরু করে বিষাক্ত পোকামাকড় আক্রমণ করে। স্কুলে যেতে পারেনা শিশুরা। মসজিদে যেতে পারে না মুসুল্লিরা। রোগী ও গর্ভবতর মায়েদের নিয়ে যাবার কোন ব্যবস্থা নেই। পৌরসভার একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকার এমন খারাপ অবস্থা যেন বাতির নিচে অন্ধকারের মতো। বাড়িগুলো নিমজ্জিত। পাশাপাশি আমরা বলতে চাই, এই পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ বাসিন্দারা ১৫ বছর ধরে পানিবন্দী হয়ে আছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও ঘরে পানি ওঠে এবং দীর্ঘদিন জালবদ্ধাতা থাকে। বৃ্দ্ধ, রোগী, নারী-শিশুরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে অপরিকল্পিতভাবে একটি সিএনজি স্টেশন গড়ে উঠেছে। সিএনজি স্টেশন করার আগে পানি কিভাবে বের হবে তা চিন্তা করে করা উচিৎ ছিল। পানি নিষ্কাশনের যে কালভার্টগুলো আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে পানি বের হবে সে-সুযোগ আর নেই। আমি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই, বর্ষা শেষে পানিপ্রবাহে যেখানে যেখানে যারা বাধা সৃষ্টি করেছে, যারা রেলের জায়গা দখল করে আছে, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার জন্য সেই জমি উদ্ধার করতে হবে এবং পানিপ্রবাহেের পথ সুগম করতে হবে। সেজন্য শক্তিশালী ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলে পানিপ্রবাহকে স্থানীয় গবাখাল জলাশয়ে যাতে নামে সে ধরনের মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। পাশাপাশি এখান থেকে লোকজনের বের হবার জন্য একটি রাস্তা ও ইলেকট্রিসিটির খুঁটিতে লাইটের ব্যবস্থা করাও জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।

স্থানীয় বাসিন্দা সংগীতশিল্পী এম আর মুন্না বলেন, এ এলাকার জনদুর্ভোগ ১৫/২০ বছর আগে থেকেই। জলাবদ্ধতা নিরসন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সড়ক নির্মাণসহ এলাকায় বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করার বিষয়ে আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেছি। আজ পর্যন্তও তাদের কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি। বর্ষাকালে আমাদের পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভার ধার্যকৃত সমস্ত কর ও আইনকানুন মেনে চললেও আমরা শহরের পৌরসুবিধা থেকে অনেক বেশি বৈষম্যের শিকার। অথচ আমরা এ শহরেরই বাসিন্দা। আমরা চাই, আমাদের প্রতি সমস্ত বৈষম্য নিরসন হোক। নইলে রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবে এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে ওই এলাকার পানিবন্দী বাসিন্দারা অংশ নেয়।

(আরআর/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৫)