সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সন্নাসী বাজারে রবিবার বিকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত দুই দুই সভাপতি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩ সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। এসময়ে বিএনপির অফিসসহ উভয় পক্ষের ২০টি দোকান ও ১০টি বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কয়েকমাস ধরে দুই সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম ও সাজারুল ইসলাম সাজুর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিল। এরই জের ধরে রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সন্নাসী বাজারে দুই সভাপতি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। রবিবার বিকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন সাংবাদিকসহ বিএনপির অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়। ভাংচুর করা হয় স্থানীয় বিএনপি অফিসসহ উভয় পক্ষের ২০টি দোকান ও ১০টি বাড়ি। আহত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এসময়ে দৈনিক দিনকালের বাগেরহাট প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন লিটন, দৈনিক কালের কন্ঠের বাগেরহাট প্রতিনিধি মামুন আহমেদ ও নাগরিক টেলিভিশনের বাগেরহাট প্রতিনিধি শেখ আহমেদ তারিক আহত হয়েছে।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু জানান, প্রতিদ্বন্দী সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদারের ছেলে মেহেদী হাসান মিঠুর নের্তৃত্বে তাদের লোকজন পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় অস্ত্র ও ইট পাটকেল নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। ঘরবাড়ী দোকানপাট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এসময়ে রাম দায়ের কোপে কমপক্ষে আমিসহ আমার পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনায় সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিমের পক্ষে তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি মেহেদী হাসান মিঠু সোমবার বিকালে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ দাবী করেন, মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন হচ্ছে বাগেরহাট জেলার গোপালগঞ্জ। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত জোট ধানের শীষ প্রতিকে ১৫৬ ভোট পেয়েছিল। একারনে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা লুটপাট করে আগুন জালিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমার পিতাসহ পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে ধীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে থাকতে হয়েছে।

আমাদের ত্যাগের কারনে জেলা বিএনপি আমার পিতাকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দায়িত্ব দেয়। আমার পিতা শত প্রতিকুলতার মধ্যে দলকে সংগঠিত করে আসছে। সম্প্রতি রামপালে ইউনিয়ন কমিটি গড়ঠনকে কেন্দ্র করে এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদককারবারির সাথে জড়িত একটি গোষ্টি আমার পরিবারের সুনাম নষ্ট করতে ও পরিকল্পিত ভাবে কমিটি গঠন বন্ধ রাখার পায়তারায় ব্যাস্ত।

এই চক্রের সদস্যরা রবিবার বিকালে বহিরাগত লোকজন নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্যসী বাজারের বসত বাড়িতে ও দোকানে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের গভীর রাতে উদ্ধার করেছে। এই সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বিএনপি অফিসে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ভাংচুর করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার সুষ্ঠতদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন মিঠু। সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল আলিম, সাধারন সম্পাদক এ্যাড. হুমাউন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিমসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে ফের সংর্ঘষের আশংকায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন পক্ষই তানায় কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

(এসএসএ/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৫)