কালীগঞ্জ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সড়ক শাখার তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন অবসরে যাওয়ার দুই বছরের অধিক সময় পার হলেও এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, উপর মহল " ম্যানেজ" করে তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মোফাজ্জেল হোসেন ঝিনাইদহ সড়ক শাখা কর্মচারী ইউনিয়ন লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত
ছিলেন। তার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানা গেছে। ঝিনাইদহ- ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে তিনি কালীগঞ্জের নতুন ব্রিজ এবং চাপরাইল ব্রিজ প্রকল্পের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি খালিশপুর ব্রিজের কাজও তদারকি করছেন। বিষয়টি জানতে চাইলে মোফাজ্জেল হোসেন অকপটে স্বীকার করেন, “উপর মহল থেকে আমাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা যদি দায়িত্ব দেন, তাহলে তারা নিজেরা আসবেন কেন?”

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ৬০ বছর পূর্ণ করে অবসর গ্রহণ করেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কালীগঞ্জ সড়ক শাখার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও কার্যসহকারী মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন। কিন্তু অবসরের পরও তিনি এখনও ওই একই পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এবং সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারেও পরিবারসহ অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জেল হোসেন দাবি করেন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজের মৌখিক নির্দেশে তিনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, “এ অঞ্চলে কার্য সহকারীর সংকট থাকায় তাকে দায়িত্বে রাখা হয়েছে।”

নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমানও একইভাবে জানান যে, “দফায় দফায় প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেও নতুন জনবল না পাওয়ায় মৌখিকভাবে তাকে দায়িত্বে রাখা
হয়েছে।”

সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদ রানার নামে অফিস কক্ষ থাকলেও, তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও বর্তমানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে মোঃ মাসুদ রানা দায়িত্বে আছেন, তবে তাকে অফিসে পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ শ্রমিকদের। শ্রমিকদের মতে, অফিসের সব কার্যক্রমই মোফাজ্জেল হোসেনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা মোবাইল যোগে জানান, তিনি ঝিনাইদহ অফিসে বসেন। কাজ থাকলে মাঝেমাঝে কালীগঞ্জ অফিসে আসেন এবং তার দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মোফাজ্জল হোসেন এই শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তবে এখানেই শেষ নয়। অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, মোফাজ্জেল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। কর্মচারী ইউনিয়ন লীগের সহ- সভাপতি থাকা অবস্থায় তিনি দাপটের সাথে ঘুষ বাণিজ্য ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, “তিনি মাস্টাররুলে ভুয়া লেবার দেখিয়ে বছরের পর বছর টাকা উত্তোলন করেছেন।”

এছাড়া, অফিস ক্যান্টিনের ঘরটি ভাড়া দিয়ে নিয়মিত ভাড়া গ্রহণ, সরকারি মালামাল ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, সরকারি গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ব্রিজের পাটাতন অবহেলায় ফেলে রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ামনকাঠি বাজারে মোফাজ্জেল হোসেনের একটি তিনতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি গ্রামের বাড়ি বাগডাঙ্গা খামারপাড়া গ্রামে
এবং বাবুবাজারে নামে বে-নামে জমি ও মার্কেট সহ প্রচুর সম্পদ রয়েছে। ২০২২ সালে বড় ছেলের বিয়েতে প্রায় ১৫–২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে জমিদারি হালে ভূরিভোজের আয়োজন করেন। তিনি ব্রিজসহ চলমান রাস্তাঘাটের কাজ ‘প্রকৌশলীর ভূমিকায়’ তদারকি করে চলেছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, তিনি এখনো বিভাগীয় কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।

তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে নাম না প্রকাশের শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে মোফাজ্জেল হোসেন নিয়মিত লেনদেন করেন। তার এসব ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলে অনেক অনিয়ম বেরিয়ে আসবে।

জনস্বার্থে এই বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর এমন অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির অভিযোগ গোটা সড়ক বিভাগের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ।

(এসএস/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৫)