আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালে ভয়াবহ হারে বেড়েছে নারী মাদকসেবীদের সংখ্যা। মাদক সেবনের করুণ পরিণতির শিকার হয়ে অনেকেই চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার জনমনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

নগরীর কেডিসি, পলাশপুর ও রসুলপুর সরকারি কলোনির পাশাপাশি শহরের অর্ধশতাধিক স্পটে প্রতিদিন চলছে মাদক বেচাকেনা। একদিকে যেমন বাড়ছে সেবনকারীর সংখ্যা, তেমনি অপরাধও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে মাদক সংক্রান্ত বিরোধে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বিল্ববাড়ি এলাকায় লিটন সিকদার লিটু খুন, উজিরপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা শাহ আলম খান খুন, বাকেরগঞ্জে বাবা ও মায়ের হামলায় মাদকাসক্ত ছেলে হাসান গাজী নিহত এবং গৌরনদীর সাউদের খালপাড় নামক এলাকায় অনিম সরদারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশালের নগরীর বাসিন্দা আলেয়া বেগম সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসতে বর্তমানে একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাদক তার জীবন কীভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আলেয়া বেগম বলেন, মাদক আমার সংসার, সন্তান সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। এখন চেষ্টা করছি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। যেকারণেই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, তরুণ-তরুণীরা একবার মাদকের সাথে জড়িয়ে পরলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা খুবই কঠিন, তাই আগে থেকেই অভিভাবকদের তার সন্তাদের প্রতি সচেতন হওয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেডিন, ফেনডিসিলসহ সবধরনের মাদকের অবাধ বিকিকিনি এখন বরিশালের নগরজীবনের এক অপ্রকাশ্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শহর নয়; জেলার প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পরেছে মাদক নামের এই ব্যাধি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী নাটকীয় অভিযানের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে অতিসম্প্রতি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট রিফাত আরা মৌরি এবং উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন মাদকের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। পৃথকভাবে তারা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে একাধিক মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছেন। তাদের এসব অভিযানের সময় দেখা গেছে, বাস্তব চিত্রে মাদকের নীরব রাজত্ব থামছেই না, বরং দিন দিন তা আরও ভয়ানক রূপ নিয়েছে।

বরিশাল নগরীর নিউ লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মর্তুজা জুয়েল বলেন, গত একবছরে শুধু আমাদের কেন্দ্রে দেড় শতাধিক নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। বরিশালে মাঝে মধ্যে মাদক রিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও তা লোকদেখানো অভিযান বলে মনে করছেন সচেতন বরিশালবাসী।

অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মাদক নির্মূলকারী কর্মীরা মাদক বিক্রেতা চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে। ফলে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেবনকারীরা ওইসব অভিযানে গ্রেপ্তার হলেও মাদকের মূল আমদানিকারক রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ওপরে যারা রয়েছে তাদের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে চালানো সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধারসহ ক্রেতা-বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করছি। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকর পেরিয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওইসব মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতারা জামিনে বেরিয়ে পূনরায় মাদকের সাথে জড়িয়ে পরছে। যেকারণে মাদকের বিকিকিনি কমানো যাচ্ছেনা। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ইতোমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে।

(টিবি/এএস/আগস্ট ০৮, ২০২৫)