শিতাংশু গুহ


আগেরবার বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমত ব্যানার্জী পা-ভাঙ্গা নাটক করেছিলেন, তিনি সফল হয়েছেন। এবার নুতন নাটক শুরু করেছেন, ‘বাংলা-ভাষা’ ও বাঙ্গালী প্রেম। গতবার তিনি ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান শুরু করেছিলেন, এবার এটি তাঁর পুঁজি। আমি বাংলাদেশের মানুষ, ‘জয়বাংলা’ আমাদের শ্লোগান, তিনি সেটি চুরি করেছেন। মমতা ব্যানার্জী’র বাংলাপ্রেম এবং বাংলাপক্ষের বাংলাপ্রেম মূলত: ‘মুসলিম প্রেম বা তোষণ’। অথচ মমতা ব্যানার্জী মুসলমানদের সামনে ভাষণ দেন ‘উর্দুতে’! তাঁর মেয়র ফিরহাদ হাকিম ক’দিন আগে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে শিগগিরই পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ উর্দুতে কথা বলবে। পশ্চিমবঙ্গের কতজন মুসলমান বাংলায় কথা বলে?

বাংলায় কথা বললেই সবাই বাঙ্গালী হয়না, যেমন ইংরেজীতে কথা বলে সবাই ইংরেজি নন। বাঙ্গালী হতে হলে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলমান নিজেদের বাঙ্গালী পরিচয়ের চেয়ে ‘বাঙ্গালী মুসলমান’ পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এঁরা বাংলার চেয়ে আরবীকে বেশি পছন্দ করেন। যদিও এটি ঘোড়ারোগ, কিন্তু উপায় কি? তাঁরা যা পছন্দ করেন, তাইতো করবেন? এ সময়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনরা বাংলায় কথা বলেন, কিন্তু এরা কেউই বাঙ্গালী নন, এঁরা মনেপ্রাণে পাকিস্তানী সংস্কৃতিকে ধারণ করেন, বাংলায় কথা বললেও এরা বাঙ্গালী নন, এঁরা ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করতে হলেও বাঙ্গালী থাকতে রাজি নন।

মমতা ব্যানার্জী কি বাঙ্গালী? তিনি বাঙ্গালী, তবে কুলাঙ্গার। তাঁর যত কারসাজি সবই ভোটের জন্যে। আমি ঘসেটি বেগমকে দেখিনি, মমতা ব্যানার্জীকে দেখেছি। প্রায়শ: আমার মনে হয় তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না, তখন কি কলকাতায় থাকতে পারবেন? তার যত অপকর্ম, মোল্লাতোষণ, মানুষ তার গায়ে থুথু ছিটাবে। তবে হ্যাঁ রাজাবাজার, থিদিরপুর বা মুর্শিদাবাদে তিনি মমতা বেগম হয়ে থাকতে পারবেন। যদিও ক্ষমতায় না থাকলে তার ‘দুধেল-গাই’রা’ তাঁকে কতটা খাতির করবেন তা বলা শক্ত। বলা হয়, ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’-আমি গণক নই, তবে মমতা ব্যানার্জি’র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিনা। পশ্চিমবঙ্গের তিনি বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন, মানুষ যখন সেটি বুঝবে, তাঁর কপালে দুঃখ আছে!

যা বলছিলাম, বাংলা ভাষা নিয়ে মমতা ব্যানার্জী ভারতে বিভক্তি ছড়াচ্ছেন। হিন্দু-হিন্দু বিভেদ সৃষ্টি করছেন। আবারো বলছি, তার লক্ষ্য ভোট। ভোটে জিততে তিনি ভারত-ভাগেও রাজি? পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা বুঝেন তো ভালো, নইলে আপনাদের অবস্থা বাংলাদেশের হিন্দুদের মতই হবে। আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমি বিজেপি-তৃণমূল-কংগ্রেস কিছুই না, থাকি আমেরিকায়, হাজার হলেও বাঙ্গালী তো? আমি ছোটবেলায় বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গে এখন তাই দেখছি। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের কুম্ভকর্ণের ঘুম না ভাঙ্গলে ‘খবর’ আছে? ভাবছেন, আপনাদের ‘আব্দুল’ বাংলাদেশের আব্দুলের মত নয়, তাহলে শুনুন, সকল আব্দুলই আব্দুল!

অবিভক্ত বাংলায় কোন হিন্দু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না, তখন আপনাদের পূর্বসূরীরা ‘ডাইরেক্ট একশান’ দেখেছিলো। ভাবছেন, সেটি ছিলো বৃটিশ জগ, এটি ভারত। কাশ্মীরের কথা ভুলে গেলে চলবে কেন? সদ্য মুর্শিদাবাদের কথা মনে আছে তো? পুরো বাংলাই মুর্শিদাবাদ হয়ে যাবে, কাশ্মীর হবে, যদিনা এখনো ‘৫টাকায়’ ডিমভাত-র লোভ সামলাতে না পারেন। বাংলাদেশে বাংলা মৃতপ্রায়, মৌলবাদ যত সক্রিয় হবে বাংলাদেশে বাংলার অবস্থা শোচনীয় হবে। বাংলাভাষী হিন্দুরা বাঙ্গালী, বাংলাভাষাকে ভালবাসলে হিন্দুকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বাংলাভাষী মুসলমানের আরবী ও উর্দুপ্রেম ক্রমশ: বাড়ছে? স্বাধীন বাংলাদেশে আগে মানুষ বলতো, ঢাকা হবে বাংলা ভাষার প্রাণকেন্দ্র, তা হয়নি-হবেও না।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।