রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) কাজী মনিরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। গত বছরের নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১০ আগস্ট) পুলিশের এই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার কাজী মনিরুজ্জামান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন এটি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(গ) ধারা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ও পলায়নে’র শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

চট্টগ্রামের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে যে বিধিমালায়, ঠিক একই বিধিমালার ১২(১) ধারা অনুযায়ী কাজী মনিরুজ্জামানকে গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এতে আরও বলা হয়েছে, বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোশ ভাতা পাবেন।

কাজী মনিরুজ্জামানকে এর আগে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, সোনা লুট, ভিন্নমত দমনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জমির স্বত্ব হারানো ভূমিদস্যু দেবহাটার ডাঃ নজরুল, আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার সুরুজ কাজী,কাজী গোলাম ওয়ারেশ, পারুলিয়ার সিরাজুল,আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদসহ একটি মহলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে খলিষাখালিতে বসবাসরত ৭৮৫ টি ভূমিহীন পরিবারকে পুলিশের সহায়তায় উচ্ছেদ করা হয় ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর। দ্রুত বিচার আইনে খালাস পাওয়া মোঃ কামরুল গাজীসহ তিন আসামিকে আদালত থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পরদিন ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র দিয়ে চালান দেন কাজী মনিরুজ্জামান। একই দিনে বদরতলা মাছের সেট থেকে ধরে এনে মাছ ব্যবসায়ি ইউনুসকে পিস্তল ও গুলি দিয়ে আদালতে পাঠান তিনি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিক
রঘুনাথ খাঁ কে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের পিএন স্কুলের মোড় থেকে কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক তারেক বিন আজিজ ও উপপরিদর্শক লোকমান অপহরন করে। রাত সাড়ে আটটার দিকে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ কে দেবহাটার খলিষাখালিতে নাশকতার কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাত সাতটার দিকে গ্রেফতার করার কথা বলা হয়। পরদিন রঘুনাথ খাঁকে সুরুজ কাজীর দেওয়া মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা ও পুলিশের দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চোখ বেঁধে আদালতে পাঠানোর আগেই ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে নিজেই ইলেকট্রিক শক ও নির্যাতন করেন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। এ
ঘটনায় তৎকালীন প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপিসহ অনেক সাংবাদিক নীরব ভূমিকা পালন করে গোপনে কাজী মনিরুজ্জামানের আস্থাভাজন হন। এ ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী খান আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই সাংবাদিককে বিএনপি জামাতের দোসর বল আখ্যায়িত করেন।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালেও কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০টি সোনার বার লুটের লিখিত অভিযোগ জানানো হয় পুলিশ সদর দপ্তরে। কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু তার পদোন্নতি হয়।

পরে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর কাজী মনিরুজ্জামানকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার পদ থেকে ডিএমপির উপকমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করে কর্তৃপক্ষ।
(আরকে/এএস/আগস্ট ১০, ২০২৫)