একে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের নাম বেতকা ও রাখালগাছি। এই চরাঞ্চলের ১০টি গ্রামের  মানুষজনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।

প্রতিদিন উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের অন্তার মোড় থেকে বেতকা ও রাখালগাছি এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। বর্ষাকালে এই নৌপথের দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথের দূরত্ব কমে ২০ কিলোমিটারে দাঁড়ায়

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় জানায়, দেবগ্রাম ১নং ওয়ার্ডের বেতকা ও রাখালগাছি অঞ্চলে সহস্রাধিক পরিবারের ৩ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। এ অঞ্চলে ভোটার রয়েছে প্রায় ১ হাজারের মতো। বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া নেই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, বাজার ও স্থাপনা। ৬ বছর আগে পাবনা থেকে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জরুরি যেকোনো বিপদ মোকাবিলায় তাদের নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়।

এই নদীটি শুষ্ক মৌসুমে পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। বর্ষাকালে লেগে যায় এক-দেড় ঘণ্টার মতো। বছরের অর্ধেকটা জুড়ে পদ্মা নদী ভরপুর থাকে। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে তাদের গোয়ালন্দ বা রাজবাড়ী জেলা সদরে আসতে হয়।

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে দেবগ্রাম ও ছোট ভাকলা ইউপির অধীনে খেয়া পারাপারের ইজারা দেওয়া হয়। ১২টি ইঞ্জিন চালিত বড় ট্রলারে যাত্রী ও ছোট যানসহ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। স্বল্প সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী যাতায়াতে অনেকে এই ঘাট ব্যবহার করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিতে অনেকে অন্তার মোড় নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এখানে একাধিক দোকান গড়ে উঠলেও যাত্রীদের বসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক কৃষক আছেন যাদের বেতকা-রাখালগাছি এলাকায় কৃষিকাজের জন্য যাতায়াত করে থাকে। নদীর পাড়ে ছোট্ট টিনের ফসল ছাউনির নিচে বসে আছেন ইজারাদারের লোকজন।

পাবনার বেড়া এলাকার সুজন সরদার বলেন, জরুরি কাজ থাকায় গত শুক্রবার রাজবাড়ী এসেছিলাম। কাজ শেষে করে বেলা ১১টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেছি। সড়কপথের চেয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৪০ টাকায় অন্তারমোড় ঘাটে আসলাম। এরপর এক ঘণ্টার মতো নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পাকা সড়কে নামব। সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাব।

নৌকার মাঝি ইছাক শেখ বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় নৌকা বেতকা-রাখালগাছি সিঅ্যান্ডবি সড়ক থেকে অন্তরমোড়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। অন্তরমোড় থেকে সকাল সাড়ে ৭ টার পর বেতকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বেতকা থেকে শেষ ট্রিপ ছেড়ে আসে সাড়ে ৫টায় পুনরায় ছেড়ে যায়। প্রতিদিন দুটি বড় নৌকা চলাচল করে। একেক গ্রুপে ৪-৬টি নৌকা নির্ধারণ থাকে। প্রতিদিনের যাত্রীর ভাড়া ভাগ করে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এভাবে ১২টি নৌকা চলাচল করে। ঝড় বৃষ্টির সময় অনেক বেকায়দায় পড়তে হয়। মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় সন্তান প্রসব বা জরুরি চিকিৎসার জন্যও নৌকায় যেতে হয়।

খেয়াঘাট পরিচালনাকারী ইজারাদার মিনাল সরদারের চাচা মো. আনোয়ার বলেন, এ বছর আমরা ৭ লাখ টাকায় এই খেয়াঘাটটি ইজারা পেয়েছি। তবে অন্তার মোড়ে নদী পারাপারে অপেক্ষামাণ যাত্রীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষকে বলবো যাত্রীদের বসার জন্য একটি যাত্রীছাউনি করে দিলে তাদের অনেক উপকার হয়।

তিনি আরও বলেন, অন্তর মোড় বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা, একটি অটো রিকশা বা ভ্যান আসলে অপরদিক থেকে অন্য কোন যানবাহন আসতে পারে না। রাস্তাটি সংস্কার করে দিলে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হতো।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, অন্তার মোড়-বেতকা দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ পারাপার হয়। রাখালগাছির সঙ্গে রয়েছে পাবনার ঢালারচর রেলস্টেশন ও পাকা সড়ক। নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পৌঁছে পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষজন ট্রেনে যাতায়াত করেন।

তিনি বলেন, ঢালার চর রেলস্টেশন থেকে রাখালগাছি পর্যন্ত পাকা সড়ক হয়েছে। ওই সড়ক থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষের দিকে। অন্তার মোড় থেকে বেতকা ঘাট পর্যন্ত নদীর ওপর সেতু হলে রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনা অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।

(একে/এএস/আগস্ট ১১, ২০২৫)