গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষে ৫ জনের নিহতের ঘটনায় গঠিত বিচার বিভাগীয়  তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে।  মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো: আবু তারিকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

৬ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঢাকা থেকে এদিন দুপুরে গোপালগঞ্জে পৌঁছে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তারা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর, জেলা কারাগার, এনসিপির সভাস্থল সহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যপারে তারা বিভিন্ন ব্যাক্তির সাথে কথা বলেন। এসময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো: মাহাবুবুর রহমান, আইনও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: সাইফুল ইসলাম, যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ২১ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহীদুর রহমান ওসমানী, ঢাকা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসাপাতালের পরিচালক সরদার নুরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়।

প্রেস ব্রিফিং এ কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো: আবু তারিক বলেন, সরকারি অফিসার , ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ, সেনা বাহিনী আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতায় স্পর্টগুলো দেখেছি । আমাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জিনিসিটা তদন্ত করার জন্য । প্রেস ব্রিফিংএ আমাদের বলার কিছু নেই। ঘুরে ফিরে দেখলাম, সব বুঝেশুনে আমরা ইনকোয়ারি করছি। আমরা অতিসত্ত্বর তদন্ত রিপোর্ট দেব।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব খন্দকার মো: মাহাবুবুর রহমান প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, আমাদের কাছে সরকার কিছু নির্ধারিত এজেন্ডা দিয়ে দিয়েছে। তদন্তে নেমে এ এজেন্ডাগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। সে ধরণের সুপারিশও আমাদের সরকারের কাছে করতে হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, আমাদের তদন্ত কাজ শেষ হয়নি। আমরা প্রাথমিক বক্তব্য সবার নিয়েছি। আমরা আজকেও স্পর্টে অনেকের বক্তব্য নিয়েছি । আগামীকাল বুধবারও আমরা যত জনের পারি বক্তব্য নিব। যেহেতু বিষটি তদন্তাধীন , এটা একটা গোপনীয় প্রতিবেদন হবে। সেটা সরকার প্রকাশ করবে। আমরা কি পাচ্ছি? কি পাইনি ? সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অপারগ। তবে আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীরা) যে এসেছেন কষ্ট করে, আমাদের কথা শুনেছেন, আপনারা ইচ্ছা করলে আমাদের কিছু তথ্য দিয়ে আলামত দিয়ে সহয়োগিতা করতে পারেন । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনাদের প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়া থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতঞ্জতা জানাচ্ছি। আমারা বুধবারও অছি সরাদিন। অপনারা যদি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা যে রিপোর্ট দাখিল করব, সেটা আরো ভাল হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঘটনার দিন বিকেলে শহরে ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। পরে কয়েক দফায় কারফিউ বৃদ্ধি করা হয় । ২০ জুলাই কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দায়েরকৃত ১৫ টি মামলায় ১৬ হাজার ১৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে।এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ২৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৪ হাজার ৯১০ জনকে আসামি করা হয়।

(টিবি/এএস/আগস্ট ১৩, ২০২৫)