রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের একাংশের সাংগঠণিক সম্পাদক ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক তথ্য পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওনের বিরুদ্ধে এক বিধবা নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে চার মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ওই নারী বাদি হয়ে বুধবার সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক মাফরুজা পারভিন মামলাটি আগামি ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরার গোয়েন্দা, অপরাধ, তদন্ত শাখার (সিআইডি) কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন (৫০) সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার মৃত সৈয়দ আজিজার রহমানের ছেলে।

ঘটনা ও মামলার বিবরনে জানা যায়, বাদীনী ও তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরার কাটিয়া মাষ্টারপাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এ সময় বাদীনীর স্বামী ক্যান্সার আক্রান্ত হন। ভাল সম্পর্ক থাকায় স্বামীকে দেখার জন্য মাঝে মাঝে বাসায় আসতেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম শাওন। গত বছরের ২৭ আগষ্ট বাদীনীর স্বামী ক্যান্সারে মারা যান। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ও সে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করায় তিনি শহরের বাপের বাড়ির পাশে একটি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন।

এ খবর জানতে পেরে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম শাওন তার বাসায় এসে খোঁজ খবর নিতেন ও দেখভাল করতেন। মাঝে মাঝে বাদীনীর মোবাইলে আপত্তিকর ম্যাসজ দিতেন আসামী শাওন। এরমধ্যে আসামী শাওন বাদীনীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশার ইঙ্গিত দিলে বাদিনী রাজী না হওয়ায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চলতি বছরের ২০ মার্চ রাত ৯টার দিকে শাওন বাদীনীর বাসায় আসেন।

বাদীনীর মাথায় হাত রেখে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণপূর্বক প্রতারণার আশ্রয় নিয়া এক অপরে বৈধ স্বামী স্ত্রী না হইয়াও আসামী শাওন বাদীনীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। যাহা ধর্ষণের শামিল। বাদিনী এ সময়কার স্থির চিত্র ও ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর থেকে আসামী শাওন বাদীনীর বাসায় প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতেন ও বাদীনীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন।

এ সময় বাদীনী বার বার বিয়ে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে নানাভাবে টালবাহানা করতেন। একপর্যায়ে তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে যেয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ও সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে যেয়ে আসামীর কয়েকজন সহকর্মী দলিল লেখককে অবহিত করেন। গত ৯ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে আসামী শাওন বাদীনীর বাসায় যান। পরদিন বিয়ে করবেন বলে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। ১০ আগষ্ট বাদীনীর বাসা ত্যাগ করার সময় চড় থাপ্পড় মেরে বলে যান যে, তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাংগঠণিক সম্পাদক। বিয়ে না করলে তাকে বাদীনী কিছুই করতে পারবে না বলে চলে যান। ওই দিনই বাদীনী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ও পরদিন ছাড়া পান। সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা (সেক্সুয়াল এ্যাসাল্ট) করানো হয়।

নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। মামলা করার সময় বাদীনীর সহিত সাংবাদিক শাওনের শারীরিক সম্পর্কের ছবি, ভিডিওসহ শতাধিক মোবাইল ম্যাসেজ এবং সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত ছাড়পত্র উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও বাদিনীর বাসায় যাতায়াতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, পাটকেলঘাটায় বাদীনী ও আসামীর একটি মাংসের দোকানে খাওয়ার ভিডিওসহ কয়েকটি ফুটেজ উপস্থাপন করা হয়। বাদি এ ঘটনায় গত ১১ আগষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ট্রাইব্যুনালে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. আলী আশরাফ।

(আরকে/এএস/আগস্ট ১৩, ২০২৫)