সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : চলতি মৌসুমের জেলায় পাটের আবাদ ভালো হলেও বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক। পাটের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি থাকলেও জেলায় পাটের আবাদ কম হয়েছে। এছাড়া  পানি সংকটের কারণে অনেক কৃষকের পাট জাগ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জমি থেকে দূরে সুবিধা মত জায়গায় জাগ দিতে গিয়ে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মুজুরী  ও পরিবহন খরচ দিয়ে পোষানো যাচ্ছে না।পাটের দাম বেশী থাকার পরও লাভের আশা নেই তেমন। 

তবে বোরো ধানের চেয়ে এবার জেলায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাট চাষীরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, মৌসুমের শুরু থেকেই পাট চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জানা যায়, জেলায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর পাটের আবাদ কমেছে। এবার পাটের আবাদ কমলেও অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত বীজ এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর পানি সংকটের কারণে অনেক কৃষক পাট জাগ দিতে পারেননি। ফলে অনেকের পাট নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। পরিবারের অন্যরা এসব কাজে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে নারীরা পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে অনেকেই ভালো দামে পাট বিক্রিও করছেন।

চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মণ পাটের ফলন হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৭শ’ টাকায়। এবার সেই দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকায়।তবে পাট জাগ দিতে গিয়ে খরচও বেড়েছে বহুগুণ। গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে পাটের দাম বেশি থাকায় কৃষক কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬১ হেক্টর। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ বেল। এবার দেশি, তোষা, কেনাফ, মেস্তা জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ভূঞাপুর এবং সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে ধনবাড়ী উপজেলায়।

কৃষি বিভাগ জানায়, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৮০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ১৭০ হেক্টর, ঘাটাইলে ৭৯০ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৩১৮ হেক্টর, মধুপুরে ১৬৩ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর, গোপালপুরে ৩ হাজার হেক্টর, সখীপুরে ২৭৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ১১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।
নাগরপুর উপজেলার কৃষক সামেজ উদ্দিন বলেন, ‘৪০ শতাংশ জমিতে এবার পাটের আবাদ করেছি। বাজারে দামও ভালো। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে খরচ কিছুটা বাড়লেও আমরা খুশি। প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মণ পাট পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর পাট কাটার আগেই নষ্ট হয়ে লোকসান হয়েছিল।’

আরেক কৃষক আয়নাল হক বলেন, ‘আমি ৫০ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে আমার ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ১৫ থেকে ১৬ মণ পাট পাবো। প্রায় ৬০ হাজার টাকায় পাটগুলো বিক্রি করতে পারবো। এ বছর বোরো ধানের চেয়ে পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলা পাট উৎপাদনে অন্যতম। বর্তমানে কৃষকেরা বাজারে পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন। আমরা সরকারিভাবে পাট চাষিদের প্রণোদনা, বিনা মূল্যে বীজ বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছি। এ বছর পাটের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছি।’

(এসএম/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২৫)