একে আজাদ, রাজবাড়ী : পদ্মা নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের ৭টি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে একটি ঘাট। স্রোতের কারণে দুটি নৌরুটে ৯টি ফেরি যানবাহন পারপার বন্ধ রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দৌলতদিয়া ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট বিলীন হয়েছে। সম্প্রতি তীব্র স্রোতের কারণে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে ফেরি নোঙর করা সম্ভব হচ্ছে না। ৬ নম্বর ঘাটে পন্টুন থাকলেও ফেরি চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। ফলে কার্যত ৭ নম্বর ঘাট দিয়েই সীমিত আকারে যানবাহন পারাপার কাজ চলছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া থেকে আসা ‘ঢাকা’ নামের একটি ফেরি ৩ নম্বর ঘাটে অনেক প্রচেষ্টার পর নোঙর করতে সক্ষম হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এ পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাটুরিয়া থেকে আসা ‘বাইগার’ নামের একটি কে টাইপ ফেরি ৪ নম্বর ঘাটে নোঙরের চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়। পরে কর্তৃপক্ষ ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ ঘোষণা করে।

ঘাট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরির মধ্যে গোলাম মওলা, কেরামত আলী, মতিউর, বরকত, ফরিদপুরসহ ৬টি ফেরি স্রোতের বিপরীতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতে না পারায় যানবাহন পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি ৯টি ফেরি দিয়ে চলাচল করলেও আগে যেখানে চার কিলোমিটার পথ অতিক্রমে ৩০-৩৫ মিনিট লাগত, এখন সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। এতে উভয় ঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হচ্ছে।

রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার রাবেয়া পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক খালেক বেপারী বলেন, ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক ও বাস দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকে থাকছে। সময় যত যাচ্ছে, অপেক্ষমাণ গাড়ির সারিও লম্বা হচ্ছে।

এদিকে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে রাজবাড়ীর ধাওয়াপাড়া (জৌকুড়া) ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ধাওয়াপাড়া থেকে নাজিরগঞ্জ নৌরুটে সকাল ৯টা, দুপুর সাড়ে ১২টা, বিকাল ৫টা ও রাত ১০টায় ফেরি চলাচল করে। তবে নির্দিষ্ট সময় ফেরি ছেড়ে না যাওয়ায় এ রুটেও ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। এ রুটে নিম্নমানের মাত্র দুটি ফেরি চলাচল করে। এর মধ্যে ‘করবী’ ফেরিটি কিছুদিন আগে সমস্যা হয়, সেই কারণে ফেরিটি বন্ধ রয়েছে এবং ফেরিটি ঘাটে নোঙর করা রয়েছে। অন্য ফেরি ‘ক্যামেলিয়া’ এতদিন চললেও তীব্র স্রোতের কারণে মাঝনদী থেকে ফিরে আসে। গৌরী নামের একটি ফেরি আরিচা থেকে আসে তারপর যানবাহন পারাপার করছে। ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) রবিউল ইসলাম বলেন, নদীর তীব্র স্রোতের কারণে রুটের দুটি ফেরি চলতে পারছে না। আরিচা ঘাট থেকে গৌরী নামে একটি ফেরি আনা হয়েছে। ওই ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আমরা ফেরির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সেপ্টেম্বর মাসে নতুন ফেরি পেতে পারি।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চালানো ও ঘাট রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে কেবল ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে যাতে ভোগান্তি না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

(একে/এএস/আগস্ট ১৬, ২০২৫)