তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : স্ত্রীকে তালাক দিয়ে প্রায় ১ যুগের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন সাইফুল ইসলাম (৪৫)। আজ শনিবার সকালে ছেলেকে নিয়ে দুধে গোসল করে তিনি এটিকে উদযাপন করেছেন। তবে স্থানীয়রা বলেছেন দাম্পত্য জীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসা দুঃখজনক। তালাক পরবর্তী এমন ব্যতিক্রমী আচরণ এলাকায় কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাটিকামারী দরগাপাড়া গ্রামে। সাইফুল ওই গ্রামের বিল্রাল শেখের ছেলে। তিনি বাটিকামারী বাজারে সিমেন্ট, বালু সহ স্যানিটারীর ব্যবসা করেন । আর স্ত্রী রোজিনা বেগম গৃহিনী।

সাইফুল ইসলাম ২০১৪ সালে ১০ অক্টোবর ভাঙ্গা উপজেলার ছোট মুসকুন্নি গ্রামের আদম আলী শেখের মেয়ে রোজিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৬ সালে এ দম্পত্তি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ প্রায় ১ যুগের দাম্পত্ত জীবনে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবরিক অশান্তিতে তাদের মধ্যে তিক্ততা বাড়তেই থাকে। এরমাত্রা চরম আকার ধারণ করে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামের সাথে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি তার ছেলে মিনহাজ শেখকে (১০) নিয়ে গ্রামে প্রকাশ্যে দুধ দিয়ে গোসল করেন।

সাইফুল ইসলাম স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সাইফুল বলেন, আমার ২ বোন ও মা-বাবা আছে। দু’বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী আমার ছেলেকে প্রায়ই মারপিট করত। বিয়ের পর থেকে আমি তার অত্যাচর নির্যাতনে তটস্থ থাকতাম। ৮ মাস আগে স্ত্রীর চাপে আমি স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাই। মা-বাবার কাছে গেলে আমার স্ত্রী আমাকে ও আমার ছেলেকে অত্যাচার নির্যাতন করত। অশান্তির মধ্যে আমরা বাবা-ছেলে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাছিলাম। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। সংসার থেকে শান্তি নির্বাসনে চলে যায়। আমরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছিলাম।

গত ৩১ জুলাই স্ত্রী আমাকে মারপিট করে। ওই দিন সে উল্টো আমি, আমার মা ও ২ বোন তাকে মারপিট করেছে বলে মুকসুদপুর থানায় মিথ্যা অভিযোগ দেয়। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ। তিনি ৪ আগস্ট আমাদের দু’ পক্ষের কথা শোনেন। ১৫ আগস্টের মধ্যে বিয়টি সমাধানের জন্য দু’ পক্ষ সময় চান। ১৫ আগস্ট পুলিশ ব্যস্ত ছিল। তাই মুকসুদপরের একটি হোটেলে দু’ পক্ষের লোকজন বসেন। ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত আপস মিমাংসার কাগজ ওই এসআই’র কাছে শুক্রবার রোজিনা জমা দিয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে সংসার জীবনের বিভিষিকাময় ১ যুগের একটি অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। এ অধ্যয় থেকে মুক্তির আনন্দে শনিবার (১৬ আগস্ট) ছেলেকে নিয়ে আমি দুধে গোসল করেছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্ত্রী রোজিনা বেগম গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাননি।

বাটিকামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ির কথা আমি শুনেছি। দুধে গোসল করে দাম্পত্য জীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসা দুঃখজনক। আমি এটিকে ধিক্কার জানাই। বিষয়টি খারাপ হয়েছে। এ ধরণের কর্মকান্ড আমি পছন্দ করি না।

মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোজিনা বেগম মারপিটের অভিযোগ আনেন স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ২ ননদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দু’পক্ষ বসে আপস মিমাংসা করেছে। আপস মিমাংসার কাগজ আমার কাছে ওই নারী জমা দিয়েছে। তবে সেখানে কি লিখেছে, তা আমি এখনো পড়ে দেখিনি। শনিবার ফিল্ড থেকে ফিরে পড়ে দেখব।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৬, ২০২৫)