নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) ও বনপাড়া পৌর প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম এর বেশ কয়েকটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যার ফলে এই কর্মকর্তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন সর্বত্র। তবে এই সব ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলো সবগুলোই তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

এসব ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিককে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মারমুখী আচরণ ও লাঞ্ছিত করা, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিুকর রহমান পাটোয়ারীকে সশরীরে উপস্থিত থেকে তার নিজ সরকারী গাড়িতে সেফ এক্সিট দেওয়া, সরকারী গাড়ি হরহামেশাই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা, বনপাড়া পৌর এলাকায় বড়াল নদী খননের অনিয়মের প্রতিবাদে ঝাড়ু মিছিল ও তার অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ, খ্রিস্টানদের সম্পত্তি জবরদখল করে সরকারী স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠির মানববন্ধন সহ বড়াল নদী খননের অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংবাদ, পৌরসভায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণ সহ সড়ক সংস্করণের দাবিতে মানবন্ধন ইত্যাদি। এই সব ভিডিও এসিল্যান্ড ও পৌর প্রশাসক আশরাফুল ইসলামকে তার কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। স্থানীয় সুশীল সমাজের অধিকাংশরাই তার কর্মকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিহিতের দাবি জানিয়েছেন।

দৈনিক ইত্তেফাক এর সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, ‘অনুমতি ছাড়াই বড়াল নদীতে ড্রেজিং, ১.৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ১০ আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে এসিল্যান্ড ও পৌর প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম তাকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন এবং মারমুখী আচরণ সহ লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক বরাবর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ভিডিও দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনে ও গুরুদাসপুর সময় নামে ফেসবুক পেইজে প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়। এর দুই দিন পর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. সিদ্দিুকর রহমান পাটোয়ারীকে তার নিজ সরকারী গাড়িতে সেফ এক্সিট দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ভিডিও নিয়ে নানাজন নানা ধরণের নেতিবাচক কমেন্টস করে ফেসবুকে।

জয়নাল মুন্সি তার পেইজে লিখেছেন, ‘সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে এসিল্যান্ড ও বনপাড়া পৌর প্রশাসক পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে এসিল্যান্ডের নিজের গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে পার করে দেওয়া হয়’।

অপরদিকে আরিফুল ইসলাম স্বাধীন প্রামাণিক লিখেছেন, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, সেনাবাহিনীওতো শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগ করতে সাহায্য করেছিলো’। শনিবার গুরুদাসপুর সময় সহ কয়েকটি ফেসবুক পেইজে দেখা গেছে এসিল্যান্ড সহ তার সরকারী গাড়ি সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু এলাকায়। সেখানে গাড়ি সহ তাকে দেখা যাচ্ছে। পেইজের ক্যাপশানে লেখা হয়েছে, ‘ক্ষমতার দাপটে সরকারী গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন বড়াইগ্রামের এসিল্যান্ড আশরাফুল ইসলাম’। কমেন্টস্ এ এঞ্জেল নরিয়ান লিখেছেন, ‘তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার ও চাকরি থেকে বহিস্কার করা উচিত তার দাবি জানাচ্ছি’।

বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এর জেলা আহ্বায়ক অমর ডি কস্তা বলেন, ২০২৪ এর ৩০ জুন তারিখে আশরাফুল ইসলাম বড়াইগ্রাম উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বনপাড়া পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে। যা জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্ত হওয়াটা জরুরী।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক আমির হামজা জানান, বর্ষা মৌসুমে খাল খনন করে জনগণের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। এই খনন এখন করার কথা নয়। মূলতঃ দুর্র্নীতি করার জন্যই এটা করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বনপাড়া মাছ বাজারে সেড ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের কথা তুলে ধরে এর তদন্ত দাবি করেন।

এ ব্যাপারে এসিল্যান্ড ও পৌর প্রশাসক আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে জানা যায় তিনি ঢাকায় আছেন এবং অসুস্থ, আপাতত কথা বলা যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে নিশ্চয়ই সেই মতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এডিকে/এসপি/আগস্ট ১৭, ২০২৫)