আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি : মধ্য যুগের অমর কাব্যগ্রন্থ “মনসা মঙ্গঁল” কাব্যর রচয়িতা ও বাংলা সাহিত্যের অমর কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত “মনসাকুন্ড” নামে খ্যাত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ৫’শ ৩৪ বছরের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী মনসা মন্দিরে দেবী মনসার বাৎসরিক পূজা ধর্মীয় আচার আচরণের মধ্য দিয়ে আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্জিকা মতে, প্রর বাংলা শ্রাবন ষ দিনে বিষ হরি (বিষ হরণকারী) বা মনসা দেবীর পূঁজা ভারতীয় উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

সকাল থেকেই দেশী-বিদেশী ভক্তরা দুধ, কলা, বৈদ্যর ডালি সাজিয়ে মন্দির আঙ্গিনায় জড়ো হতে থাকে। হাজার হাজার ভক্ত সমাগমের কারণে অন্তত চারবার পুজা অনষ্ঠিত হয় দেবীর চরণে। ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।

বর্তমানে মনসা মন্দিরটি ধর্মীয় উপাসনালয়ের পাশাপাশি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। বরিশাল জেলা প্রশাসন জেলার দর্শনীয় স্থানের তালিকার শীর্ষে রেখেছে ঐতিহাসিক বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরের নাম। দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পর্যটনের উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে রয়েছে এ মন্দিরের নিজস্ব স্বীকৃতি।

ঐতিহাসিক মনসা মঙ্গল কাব্য মতে, ৫শ ৩৪ছর আগে মধ্য যুগে সুলতান হোসেন শাহর সাসনামলে ইংরেজী ১৪৯৪ সনে কবি বিজয় গুপ্ত দেবী মনসা র্কর্তৃক স্বপ্নে দেখে নিজ বাড়ির সু-বিশাল দীঘি থেকে পূঁজার একটি ঘট পেয়ে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে মনসা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন পূজা অর্চণা শুরু করেন।

পরে দেবী মনসার আদেশে দিঘীর ঘাটের পাশ্ববর্তি একটি বকুল গাছের নীচে বসে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েই “মনসা মঙ্গল” কাব্য রচনা করেন বিজয়গুপ্ত। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান হোসেন শাহর রাজত্বকালে ওই বছর বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গঁল রচনা করে রাজ দরবারে “মহা কবি”র খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, দেবী পদ্মা বা মনসা বিজয় গুপ্তের কাব্য রচনায় সন্তুস্ট হয়ে আশির্বাদ হিসেবে বিজয় গুপ্তকে স্বপ্নে বলেছিলেন “তুই নাম চাস, না কাজ চাস?” উত্তরে বিজয় গুপ্ত বলেছিলেন “আমি নাম চাই”। যে কারনে তার নাম বিশ্বেব্যাপি ছড়িয়ে পড়লেও তিনি দেহত্যাগ করেছেন উত্তরাধিকার বিহীন।
বিজয় গুপ্তর জন্ম তারিখ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে নির্নয় করা হলেও মৃত্যু কাল সম্পর্কে সঠিক কোন দিন তারিখ গবেষকেরা বলতে পারেন নি। তবে গবেষকদের ধারণা মতে, সম্ভবত ৭০ বছর বয়সে ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে কাশী ধামে বিজয় গুপ্ত দেহত্যাগ করেন।

বিজয় গুপ্তই সর্বপ্রথম তার রচিত মনসা মঙ্গল কাব্যে ইংরেজী দিন, তারিখ ও সনের লিপিবদ্ধ করেন। এর আগেও একাধিক পন্ডিত ও কবিরা মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। যার অন্যতম ছিলেন ময়মনসিংহ’র কানা হরি দত্ত। কিন্তু তাদের তুলনায় বিজয় গুপ্তর কাব্য নিরস হলেও নৃপতি তিলক’র (সুলতান হোসেন শাহ) গুনকীর্তন ও ইংরেজী দিন, তারিখ ও সনের লিপিবদ্ধ করার কারণে তিনিই হয়ে ওঠেন মনসা মঙ্গল কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম। “মহা কবি” খেতাব পাওয়ার পর সমগ্র ভারতবর্ষে মহা ধুমধামে মনসা দেবীর পূঁজার প্রচলন ঘটে। মহাকবি বিজয় গুপ্তের পিতার নাম সনাতন গুপ্ত ও মাতার নাম রুক্সিনী দেবী।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৭, ২০২৫)