আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে অফিসে প্রভাব বিস্তারকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে গৌরনদীতে যোগদান করেন মো. সালাউদ্দিন। সেসময় নিজেকে ছাত্রজীবনে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটটের পদধারী ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিতেন। অফিসে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য কখনো নিজেকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক হুইপ আসম ফিরোজ আবার কখনো সাবেক দূর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে অফিসে প্রভাব বিস্তার করতেন।

ওইসময় তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিখা-কাবিটা ও ব্রিজ নির্মাণ কাজ থেকে ১০% করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের সাথে গভীর সখ্যতা থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গতবছরের ৫ আগস্টের পর পরই তিনি প্রথমে নিজেকে জামায়াতের লোক এবং পরবর্তীতে বিএনপির লোক হিসেবে দাবি করে আসছেন।

টিআর-কাবিখা প্রকল্পের একাধিক সভাপতি ইউপি সদস্যগণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পতিত সরকারের আমলে পিআইও সালাউদ্দিন আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে প্রকল্প থেকে পার্সেন্টিজ আদায় করতেন। বর্তমানেও তার পার্সেন্টিজ আদায় অব্যাহত রয়েছে। সে অফিসে আশরাফুল নামের একজন বহিরাগত লোক দিয়ে এসব অনিয়ম পরিচালনা করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেক কাজের বিল কৌশলে তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার বাউফলের বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর গৌরনদী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরআগে তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর ও পিরোজপুর সদরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সিলেটের জৈন্তাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে কর্মরত থাকাকালীন সালাউদ্দিন ব্যাপক অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন। যে কারনে জনরোষের ভয়ে রাতের আধাঁরে তাকে জৈন্তাপুর থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিলো। এরপর পিরোজপুর সদর উপজেলায় যোগদান করেন। সেখানেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় ছয় মাসের মধ্যেই সেখান থেকে তাকে বদলী করা হয়। ভূক্তভোগী বাসিন্দারা অনতিবিলম্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিনকে গৌরনদী থেকে অন্যত্র বদলী করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পার্সেন্টিজ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই। যারা আমার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেনি তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২৫)