শেবামেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট, আন্দোলনকারী যুবক গ্রেপ্তার
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : চিকিৎসক ও কর্মচারীর ওপর হামলার ঘটনার বিচার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে জরুরী সেবা চালু রেখে কর্মবিরতিতে রয়েছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) শেবামেক হাসপাতালে দেখা গেছে, ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপস্থিতি নেই। সোমবার বেলা ১২টা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তারা হাসপাতালের পরিচালকের সাথে সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য সেবায় অনেকটা নেকিবাচক প্রভাব পরেছে।
অপরদিকে একই দাবিতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মেডিক্যাল কলেজের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন। এসময় তারা বলেন, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে তারা এই কর্মসূচী পালন করেছেন।
মিডলেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত জানান, শেবামেকের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্সিং অফিসার, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনির বলেন, জরুরি সেবা স্বাভাবিকভাবেই চলছে। হামলা মারধরের পর ডাক্তাররা ভয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে। সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে বরিশালে চলমান স্বাস্থ্যসেবা খাত সংস্কার দাবির আন্দোলনে গত ১৭ আগস্ট বিরোধে জড়ান আন্দোলনকারী এবং শেবামেকের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ওইদিন ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হন হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. দিলীপ কুমার। এরপূর্বে আন্দোলনকারীদের সাথে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
হামলাকারী এক যুবক গ্রেপ্তার ॥ শেবামেকের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় হোসাইন আল সুহান নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত হোসাইন আল সুহান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
ওসি আরও জানান, সুহানকে গ্রেপ্তারের সময় স্বাস্থ্যখাত আন্দোলনের কয়েকজন সদস্য জোর করে টহল পিকআপে উঠেছিল। তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুহানকে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হবে।
তবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের সদস্য তাহমিদ ইসলাম দাইয়ান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। এজন্য আমরা নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের নগর ভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। এসময় সেখান থেকে পুলিশ আমাদের সমন্বয়ক সুহানসহ আরও তিনজনকে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বেশ অনেকসময় পর সুহানকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। যারা ছাড়া পেয়েছেন তারা জানিয়েছেন, সুহানকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এমনকি যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীও ছিলো। তারা সুহানকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধরসহ শ্লীলতাহানী করা হয়। এসময় কোন নারী পুলিশ ছিলোনা বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এর আগে সোমবার (১৮ আগস্ট) শেবামেকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাহাদুর শিকদার বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনিকে একমাত্র নামধারী ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে জনতার ওপর হামলা, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতসহ মারধর করে গুরুত্বর ও সাধারণ জখম এবং হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরপূর্বে গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে শেবামেকের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়ের চন্দ্র শীল বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে শেবামেকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে মহিউদ্দিন রনি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিসহ ৪২ জনকে আসামি করা হয়।
(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২৫)