দিনাজপুর প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর হলেও দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামে শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ওই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের।

শনিবার বিকেলে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শাহাদত হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক সাংসদ আব্দুল মালেক সরকার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল জব্বার, বীর মুক্তিযোদ্ধা দবিরুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী। সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিনের পুত্র আলহাজ্ব রুস্তম আলী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিমউদ্দিন আহমেদের পুত্র মহিরউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য আনসার আলী ও মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক একরাম তালুকদার। অনুষ্ঠানে গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

বিরল উপজেলার পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামে পুনর্ভবা নদীর তীরে শহীদদের সমাধিস্থলের পাশে শনিবার বিকেলে ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের উদ্বোধন করা হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও শহীদদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের নির্মানকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন।
এদিকে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান সম্পন্ন হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দীন আহমেদের জৈষ্ঠ্যপুত্র আলহাজ্ব রুস্তম আলী জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৩ বছর ধরে তারা স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল। সরকারি স্বীকৃতি তো দুরের কথা তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করায় কিছুটা হলেও তাদের স্বজন হারানোর বেদনা লাঘব হয়েছে। পাশাপাশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মাও শান্তি পেয়েছে। এতে বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিমউদ্দিনের পুত্র মহিরউদ্দিন আহমদও জানান একই কথা।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দীন আহমেদের নাতি আনসার আলী এবং অপর নাতি শিক্ষা কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ হওয়ায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এখন তারা আর কিছুই চাননা, চান শুধু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তারা বলেন, বিগত দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকায় তারা স্বীকৃতি পায়নি। এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। তাই তারা এই সরকারের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান এই দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শাহাতদ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল মালেক সরকার, দবিরুল ইসলামসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধা আজিমউদ্দিন আহমেদ।

(এটি/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৪)