রূপক মুখার্জি, চর-শালিখা থেকে ফিরে : নড়াইল সদর উপজেলার চর-শালিখা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর আতঙ্কে দিন কাটছে ৫০টিরও অধিক পরিবারের। ভয়, আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় জড়োসড়ো হয়ে পড়েছে চর-শালিখার মানুষজন।

প্রতিপক্ষের মামলা, হামলার হুমকি ও লুটপাটের কারণে গ্রামের পরিবেশ হয়ে উঠেছে চরম উত্তপ্ত ও ভীতিকর। সকলের মধ্যেই আতঙ্কের ছাপ! কখন আবার হামলা হয়!

সরেজমিনে চর-শালিখা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বাড়িঘরে হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। ঘরের টিনের বেড়া কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। বসতঘর, দোকানপাট, রান্নাঘর—কোনো কিছুই রেহাই পায়নি দুর্বৃত্তদের হাত থেকে। সাজানো-গোছানো ঘরবাড়ি একেবারে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এসব বাড়ির নারী-শিশুদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। অজানা ভয় আর আতংকে এসব নারী ও শিশুরা কথা বলতে পারছে না!

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চর-শালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তিন রাস্তার মোড়ে গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার আজিজার শেখ গ্রুপ এবং পশ্চিম পাড়ার মশিয়ার শেখ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে নারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। সংঘর্ষের পর আজিজার শেখ সমর্থিত অন্তত ৮টি বাড়িঘর ও স্থাপনায় ব্যাপক হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।

এ অবস্থায় আজিজার শেখ গ্রুপের পুরুষ সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে ওই পরিবারগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। এখন মামলা, হামলা ও হুমকির মুখে নারী ও শিশুরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

মিঞ্জু শেখের স্ত্রী সাবানা, বেলাল শেখের স্ত্রী হেনা বেগম, এবং নজরুল শেখের স্ত্রী বেবি জানান, ‘আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। মশিয়ার শেখ পক্ষের লোকজন নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। ভয় ও নিরাপত্তার অভাবে আমাদের পুরুষরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। দিনের বেলা বাড়িতে থাকলেও, রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘চর-শালিখা গ্রামে আজিজার শেখ ও মশিয়ার শেখ পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। গত শনিবার দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষ তিনটি মামলা করেছে, যেখানে মোট ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় দুই মাস আগে এক সংঘর্ষের জেরে দক্ষিণ পাড়ার আজিজার শেখ সমর্থিত লোকজন গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। পুলিশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের হস্তক্ষেপে চলতি মাসে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে তারা এলাকায় ফিরে আসেন।

তবে ৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে মশিয়ার শেখ গ্রুপের একজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পলিথিন আটক ও জরিমানা করা হয়। এর ফলে মশিয়ার গ্রুপে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।

এরই মধ্যে, ১৬ আগস্ট সকালে ডোঙ্গা বিক্রি করতে যাওয়ার পথে সীতারামপুর ব্রিজের ওপর মশিয়ার গ্রুপের মুরাদ শেখকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা।

এই ঘটনার সুযোগে আজিজার শেখ গ্রুপ মশিয়ার গ্রুপের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পাল্টা আক্রমণে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের নারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ২৩, ২০২৫)