একে আজাদ, রাজবাড়ী : আওয়ামী লীগের বিগতদিনের কর্মকান্ড এবং মাঠে না থাকায় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি’ দলের প্রভাব বেড়েছে রাজবাড়ী-২ আসনে। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে মূল লড়াইটাও হবে এ দুই ধারার প্রার্থীর মধ্যে, হতে পারে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইতোমধ্যে মাঠ দখলে তৎপর হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টি রয়েছে দোটানায়। তবে বিএনপিতে রয়েছে গ্রুপিং জটিলতা, আর চলছে প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে এখনো সব এলাকায় কমিটি দিতে পারেনি তরুণ শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এরপরও ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের অনুসারীরা।

অন্তবর্তী সরকার নির্বাচনি সময়সীমা ঘোষণা করার পর যাত্রা শুরু করেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন। তৎপর হচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। ইতোমধ্যে সারাদেশের ন্যায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে রাজবাড়ী-২ আসনের ভোটের মাঠেও।

রাজবাড়ী জেলার পাংশা-বালিয়াকান্দি -কালুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-২ আসন।জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও গ্রুপিং জটিলতায় এ আসনে প্রার্থীর প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।

রাজবাড়ী-২ আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিক সম্পাদক মো: হারুন-উর-রশিদ এর নাম চূড়ান্ত ভাবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র কমিটি। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের পর্যায় গণসংযোগ করে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবুল হোসেন,কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী রহমান মানিক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, এছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির শরিক দল হিসেবে এনডিএফ মহাসচিব ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোমিনুল আমিন প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে। তার দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে জোটের শরিক দল হিসেবে এনডিএম কে রাজবাড়ী-২ আসন তারা ছেড়ে দিবেন।

মৌলিক সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে আগামী বছরের ফেব্রয়ারিতে ভোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সন্দেহ-সংশয়ের অবসান হয়েছে। ফলে রাজবাড়ী-২ আসনের নেতা কর্মীরা এখন নির্বাচনি মাঠ গোছাতে তৎপর। কিন্তু বিএনপির প্রাথী চুড়ান্ত না হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা মনোনয়ন পেতে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। অন্যদিকে ৩ মাস আগেই প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকান্ডে মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

তবে হাটে বাজারে চায়ের দোকানে বসে সাধারণ ভোটার বলছেন, রাজবাড়ী জেলার গর্ব অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল এস এম মতিউর রহমানের বিকল্প রাজবাড়ী-২ আসনে এই মুহুর্তে নেই।তবে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মো: হারুন-উর-রশিদ এর দাবী ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসন থেকে জামায়াতের প্রাপ্তি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। এর পর আর কখনো এককভাবে জামায়েত এই আসনে প্রার্থী দেয়নি, তবে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দীর্ঘদিন পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে জামায়েত এই আসন থেকে নির্বাচন করবে।আগের থেকে জামায়েত ইসলামীর সমর্থক ও নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক গুন বেড়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে ও সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি পথ কেন্দ্রে ২০০ জনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামি নির্বাচনে এই আসন আবার জামাতের দখলে আসবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তবে তার কর্মী সমর্থকদের দাবি বিএনপি থেকে তাকেই মনোনীত করা হবে।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ দীর্ঘদিন ধরে রাজবাড়ী জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ করছে। তার দাবী বিএনপির থেকে তাকেই আগামী নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসন থেকে মনোনীত করবে দল।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবুল হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি।দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সৈনিক হিসেবে বিএনপি থেকে আমাকে মনোনীত করবে আমি আশাবাদী।

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী রহমান মানিক বলেন, বিএনপি করার কারণে একাধিকবার জেল কেটেছি কখনো হাল ছাড়েনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে আমি রাজবাড়ী-২ আসনের প্রতিটি অলিতে গলিতে কোন সংযোগ চালাচ্ছি। বিএনপি'র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে জানান দিচ্ছি। আমি আশাবাদী দল থেকে আমাকে মনোনীত করবে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপি'র কর্মী সমর্থকদের পাশে থেকেছি। তাদের সুখে দুখে সব সময় পাশে থেকেছি। রাজবাড়ী-২ আসনের সাধারণ ভোটাররা আমাকে চায়। দল যদি আমাকে মনোনীত করে আমি অবশ্যই এই আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।

(একে/এসপি/আগস্ট ২৩, ২০২৫)