আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় রাজিহার ইউনিয়নের সাবেক নারী ইউপি সদস্য লিপিকা বালার মৃত্যুর অভিযোগে ওই হাতুড়ে চিকিৎসক কিরণ বেপারীকে গ্রেফতার কে ছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতর ছেলে সঞ্জিব বালা বাদী হয়ে ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মমলা দায়ের করলে পুলিশ ওই মামলায় কিরণ বেপারীকে রবিবার বরিশাল আদালতে প্রেরণ করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিঞতর লাশ বরিশাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

নিহতর সন্তান, মামলার বাদী স্কুল শিক্ষক সঞ্জিব বালা অভিযোগে জানান, শনিবার (২৩ আগস্ট) থেকে ডায়রিয়া ও সামান্য জ্বর নিয়ে নিজ বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের সাবেক নারী সদস্য কান্দিরপাড় গ্রামের মৃত সুনিল চন্দ্র বালা’র স্ত্রী লিপিকা বালা (৫০)।

রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে হঠাৎ তিনি গ্যাসটিকের সমস্যা বোধ করলে ছেলে স্কুল শিক্ষক সঞ্জিব বালা মায়ের চিকিৎসার জন্য একই এলাকার কৃষ্ণকান্ত বাড়ৈ’র ছেলে হাতুড়ে চিকিৎসক কিরণ চন্দ্র বাড়ৈ’কে খবর দেন। হাতুড়ে চিকিৎসক কিরণ চন্দ্র বাড়ৈ এসে প্রথমে ওই নারীর শরীরে স্যালাইন ও অন্যান্য এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করার সাথে দুই তিন মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন লিপিকা বালা। তাদের অভিযোগ হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায়ইতার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে চিকিৎসক চিকিৎসা করলেও শুধুমাত্র ৫ মাসের একটা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ছাড়া নেই কোন সার্টিফিকেট।

তরা অভিযোগে আরও জানান, রবিবার সারাদিন অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন স্থানীয় প্রভাশালীরা।

পরে খবর পেয়ে রবিবার রাতেই অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির দাবী জানান ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী।

অপচিকিৎসায় মৃত্যু হওয়া ওই নারীর অন্যান্য স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, বাড়িতে এসে হাতুড়ে ওই চিকিৎসক রোগীকে দেখে স্যালাইন ও অনান্য এন্টিবায়টিক ইনজেকশন পুশ করার কথা জানানোর পর পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলেও এক প্রকার জোর করেই ওই নারীর শরীরে স্যালাইন ও অনান্য এন্টিবায়টিক ইনজেকশন পুশ করে হাতুড়ে ওই চিকিৎসক। এতেই সাথে সাথে মৃত্যু হয় তার। এসময় রোগীর এমন অবস্থা দেখে পুশ করা এন্টিবায়টিক ইনজেকশনের প্যাকেট নিয়ে পালিয়ে যায় সে। এর আগেও হাতুড়ে ওই চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া হয় সমস্ত ঘটনা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির দাবী জানান তারা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক কিরণ চন্দ্র বাড়ৈ রোগীকে স্যালাইন দেয়ার কথা স্বীকার করলেও অন্যান্য এন্টিবায়টিক ইনজেকশন পুশ করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও অস্বীকার করেন। চিকিৎসকের সার্টিফিকেটের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, শুধুমাত্র ৫ মাসের পল্লী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ছাড়া তার নেই কোন ধরণের সার্টিফিকেট নেই।

আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওই হাতুড়ে চিকিৎসককে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ময়না তদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০৪ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আসামী কিরণকে সোমবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২৫)