খুনের আসামিরা যাচ্ছে বিদেশ, বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পরিবার

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা। নিরবে কাঁদছেন আর সন্তানের ছবিতে হাত বুলাচ্ছেন। কখনও আঁচল দিয়ে প্রিয় সন্তানের ছবি মুছে দিচ্ছেন। চোখের সামনে প্রিয় সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করা হলেও বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা এ মায়ের চোখেমুখে। কারণ, হত্যা মামলার এক আসামি ইতোমধ্যে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে চলে গেছে বিদেশে। অন্যদেরও যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ অবস্থায় আদৌ বিচার পাবেন কিনা সেই শঙ্কায় মা আন্না খাতুন। তবুও বাকি আসামির কঠোর বিচার চান এই মা।
একই ঘটনায় হত্যার শিকার লাল্টুর পরিবারেও চলছে শোক,সাথে বিচার না পাওয়ার শঙ্কা। স্বামীকে চোখের সামনে কুপিয়ে হত্যা হতে দেখেও আটকাতে পারেননি স্ত্রী জেসমিন খাতুন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তার। সন্তানরা বাবার কথা জানতে চাইলে সান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন জেসমিন। এত কষ্ট সহ্য করার পর আবার স্বামীর হত্যাকারীরা চলে যাচ্ছেন বিদেশ। বিচার পাবেন কিনা সেই শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তবুও স্বামী হত্যার বিচার চান তিনি।
জানা যায়,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হবার দ্বন্দ্বে ২০২০ সালের ১১ মে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধূলিয়াপাড়া গ্রামের ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের শেষবর্ষের ছাত্র অভি ও তার চাচাতো ভাই লাল্টুকে নির্মমভাবে জোটবদ্ধ হয়ে বাড়ির উপর গিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ভাইকে নৃশংস খুনের হৃদয়বিদারক সে ঘটনা তৎকালীন প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। সেসময় শৈলকুপা থানায় একই গ্রামের জহুরুল ইসলাম জিরো, মুকুল হোসেন, কালাম হোসেন, মিরাজ হোসেন, সোহেল খাঁ, শরিফ খাঁ, হাসিব খাঁ, আশা খাঁ, আলী খাঁসহ এজাহার নামীয় ৪৬ জনসহ মোট ৫২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বর্তমানে মামলাটি অতিরিক্ত জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে অভিযুক্তরা বিদেশ গমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মামলার ১৯ নাম্বার অভিযুক্ত হোসেন আলী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইতোমধ্যে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছেন। আরো অন্তত ২০ জনের অধিক পাসপোর্ট সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই যেকোন সময় দেশত্যাগ করবেন বলে দাবি হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারটির। জোড়া খুনের এই ঘটনার বিচার চান এলাকাবাসীও। এই হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার হলে শৈলকুপায় নজির সৃষ্টি হবে এবং হত্যাকান্ড অনেকাংশে কমবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
হত্যার শিকার অভির বাবা লুৎফর রহমান বলেন, 'প্রকাশ্যে ছেলেকে হত্যা করা হলো। মামলা চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে মামলা তুলে নিতে অনেক চাপ এসেছে, তবুও মামলা তুলিনি। এখন সেই মামলার আসামীরা বিদেশ চলে যাচ্ছে। আদৌ বিচার পাবো কিনা সেই শঙ্কায় আছি।'
অভির ভাই পলাশ বলেন, 'অভি ও লাল্টু কেউই রাজনীতি করতো না৷ কিন্তু বাড়ির উঠানে এসে তাদেরকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। ইতোমধ্যে একজন বিদেশ চলে গেছে। অন্যরাও যেকোন সময়ে চলে যাবে। যারা এখনও যেতে পারেনি তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান বলেন, 'গুরুতর মামলার অভিযুক্তরা নিজেকে আড়াল করতে চিকিৎসা, ধর্মীয় বিষয় কিংবা বিশেষ অজুহাত দেখিয়ে আদালতের আদেশ নিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে আসলে থানা পুলিশের কিছু করার থাকেনা।
জোড়া খুনের এই ঘটনার সঠিক বিচার চান স্বজন ও এলাকাবাসী। এই বিচার শৈলকুপায় নজির সৃষ্টি করবে বলে ধারণা তাদের।
(এসআই/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২৫)