স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোর শহরের সিটি কলেজ পাড়ার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী মজিবুর রহমান খান মহারাজ। তিনি পেশায় একজন হোটেল শ্রমিক। মহারাজের দিন শুরু হয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম দিয়ে, আর শেষও হয় একইভাবে। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি একজন হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় পার করেছেন অন্যের খাবার পরিবেশন করে। এঁটো থালাবাসন পরিষ্কার করে। এই নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি তার তিন মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজও তিনি হোটেল শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছেন। 

১৯৯৩ সালে তিনি যখন এই পেশা শুরু করেছিলেন, তখন তার দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র আট আনা। আজ দীর্ঘ তিন দশক পর তার মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে পাঁচ সদস্যের সংসার চালানো তার জন্য এক দুরূহ কাজ। তবুও তিনি হার মানেননি। তিনি এখন যশোর জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতো হাজারো শ্রমিকের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছেন।

মজিবুর রহমানের এই সংগ্রাম একা নয়। তার মতো আরও হাজারো শ্রমিকের জীবন যেন এক করুণ কাব্য। তেমনি এক করুণ গল্পের আরেক চরিত্র ১২ বছর বয়সী আরিফ হোসেন মুন্না। যে বয়সে তার বইখাতা হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো। সেই বয়সে সে হোটেলের এঁটো কুড়িয়ে বেড়ায়। মুন্নার বাবা নেই। সংসারের সকল দায়ভার তার কাঁধে। দৈনিক মাত্র ৩০০ টাকা মজুরিতে মা, বোন এবং ছোট ভাইকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে হোটেল মালিকের দেওয়া তিন বেলার খাবারই তার সম্বল। রাতে হোটেলের খাবারের টেবিলেই তার আশ্রয়। তার চোখে স্বপ্ন আছে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা তাকে শৈশবেই বড় করে তুলেছে।

মজিবুর রহমান মহারাজ বা আরিফ হোসেন মুন্নার মতো অসংখ্য হোটেল শ্রমিকের জীবন সংগ্রাম জনসমক্ষে তুলে ধরতে যশোর জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এক মানববন্ধন করেছে। বুধবার সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মিছিল সহকারে ব্যানারে এসে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবি জানান। তাদের ¯েøাগান ছিল, আমরা চাই জীবনের নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা। মানববন্ধনে শ্রমিকরা তাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন।

তাদের মূল দাবি ছিল সরকার যেন তাদের ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। এছাড়াও সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির গেজেট বাস্তবায়ন,গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ তহবিল, ছুটি ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণ।

মানববন্ধনে উপস্থিত শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, নতুন বাংলাদেশে সকলের দাবি মেনে নেওয়া হলেও হোটেল শ্রমিকরা আজও বঞ্চিত। তাদের নায্য অধিকারের আন্দোলনকে সরকার উপেক্ষা করছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মজিবুর রহমান খান মহারাজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন, সদস্য ফরিদ হোসেন, বাবু হোসেন প্রমুখ।

(এসএমএ/এএস/আগস্ট ২৭, ২০২৫)