কালীগঞ্জে ৬ লেন সড়ক প্রকল্পে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ৬ লেন রাস্তা নির্মাণ কাজে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ব্যবসায়িক ও শ্রমিক কর্মী কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ সংগঠন। রঘুনাথপুর বাজারসহ এ প্রকল্পের সাথে জড়িত প্রায় পাঁচশোরও বেশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিক এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে “উই কেয়ার ফেজ” নামে একটি এনজিও সংস্থা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড, ট্যাক্স নথি, কর্মচারীর সংখ্যা ও বেতন কাঠামো, ব্যাংক ঋণের তথ্যসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিল। তখন তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, তৎকালীন এমপির সহায়তায় জেলা প্রশাসক অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালাল চক্র একের পর এক আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বর্তমানে ক্ষতিপূরণের দাবি তুললে তাদের বলা হচ্ছে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে।
মানববন্ধনে ব্যানার-ফেস্টুনে ‘উই কেয়ার ফেজ’ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয় এবং ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমরা বহু কষ্ট করে ব্যবসা করি। জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন, কিন্তু আমরা যারা ব্যবসায়ী আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।”
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জহর ডাক্তার বলেন, “তৎকালীন এমপি আনার, সাইদুল করিম মিন্টু ও রিয়াজ নামের এক সার্ভেয়ারের কারসাজিতেই এ অনিয়ম হয়েছে।”
দৈনিক নবচিত্র পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা জমি মালিক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিনা। ব্যবসায়ীদের সঠিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। প্রয়োজন হলে আমরা এক জোট হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাব।”
উল্লেখ্য, সরকার ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ঝিনাইদহ বাইপাস থেকে যশোর মহাসড়ক পর্যন্ত ৪৭.৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেন মহাসড়ক প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রকল্পের জন্য মোট ৪,১৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। প্রথমে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পে শুধু কালীগঞ্জ অংশে বেসরকারি মালিকদের ভূমি ও অবকাঠামোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২১৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক, ঝিনাইদহ এলএ শাখা থেকে ৭ ধারার নোটিশ প্রদান করা হয়। ভূমি মালিকরা নিয়মমাফিক আপত্তি দাখিল করলেও কোনো শুনানি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে বৈষম্য করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট ভূমি মালিকদের দেয়া ৮ ধারার নোটিশে এ বৈষম্য প্রকাশ পায়। এই বৈষম্যতার প্রতিবাদে গত ২৩ আগস্ট অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিকেরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা ৮ ধরা নোটিশ বাতিল করে পুনরায় সার্ভের মাধ্যমে জমির সঠিক মূল্য নির্ধারণের দাবি জানান।
মানববন্ধনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদান না করা হয় তবে তারা সড়ক অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে নামবেন।
(এসএস/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০২৫)