এক নারীর কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়
বড়াইগ্রামে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে মব তৈরী ছাত্রদলের নেতাদের
.jpg)
নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামে বাসা বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এক নারী (৩৪) কে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানী, ভিডিও ধারণ ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রদলের চিহ্নিত কয়েকজন নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নারী বুধবার রাতে বড়াইগ্রাম থানায় ৫ জন ও অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্য ও মামলার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বনপাড়া শহরের বনরূপা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় দুই সন্তান সহ দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বসবাস করে আসছে ওই নারী। বড় ছেলে স্থানীয় একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ওই নারীর স্বামী দেশের বাইরে কর্মরত।
গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই নারীর বাসায় বেড়াতে আসে আত্নীয়ের সম্পর্কের এক বড়ভাই (৪৫)। এ সময় পাশের ফ্লাটের বসবাসকারী স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রনি মোবাইল ফোনে ডেকে আনে তার সহযোগীদের। অতঃপর তারা ওই নারীর ঘরে ঢুকে ওই নারী ও আত্নীয়ের সম্পর্কের বড়ভাইকে ঘিরে পরকীয়ার অপবাদ দেয় এবং পিস্তল দেখিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় যেতে বলে মারধর করে ও ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে মিডিয়ার লোক ডেকে আনবে, ভিডিও ভাইরাল করবে এই ভয় দেখিয়ে তারা ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। এই চাঁদা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই এমন অপরাগতা স্বীকার করে পা ধরে মাফ চাইলেও তারা যে কোন উপায়ে হোক চাঁদার টাকা দেওয়ার জন্য শারিরীক নির্যাতন চালাতে থাকে।
পরে ওই নারী তার ৩ ভরি স্বর্ণালংকার বনপাড়া শহরের আরএস মার্কেটের ভাই-বোন জুয়েলার্সে বন্ধক রেখে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়। এ সময় তারা বাকি ৭ লক্ষ টাকা ৩ দিনের মধ্যে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্থান ত্যাগ করে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে উপস্থিত হয়ে ঘটনা খুলে বললে তিনি বিষয়টি তাৎক্ষনিক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেনকে অবহিত করেন।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, জানতে পেরেছি যারা আমার উপর নির্যাতন চালিয়েছে ও টাকা নিয়েছে তারা সকলেই বনপাড়া পৌর ছাত্রদলের বিভিন্ন পদধারী নেতা। তাই ওসি আমাকে মামলা করার পরামর্শ দিলেও আমি তাৎক্ষনিকভাবে মামলা করতে সাহস পাই নাই। পরে ইউএনও স্যারের কাছে গেলে উনি আমাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার পরামর্শ দেন এবং আইনের সাহায্য নিতে বলেন। অতঃপর আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করি। মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলা গেট এলাকার লোকমানের ছেলে রনি (২৯) ও তার স্ত্রী সুমাইয়া (২৪), হারোয়া এলাকার মৃত শহীদুল ইসলামের ছেলে বেলাল হোসেন বিদ্যান (২৮), আটুয়া এলাকার ফারুক বাকাউলের ছেলে ইকবাল হোসেন (২৮), সরদারপাড়ার কামাল হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৮) ও অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জন।
ওসি গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা (নং-৩৫, তারিখ: ২৭.৮.২৫) রুজু করা হয়েছে। ঘটনার পর আসামীরা সকলেই পলাতক। তাদেরকে আটক করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বনপাড়া পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, অপরাধীদের কোন দলীয় পরিচয় নাই। যদি প্রমাণিত হয় সংশ্লিষ্টরা অপরাধী তবে তাদেরকে দল থেকে বহিস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, এই ঘটনায় আইন মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এডিকে/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০২৫)