ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুরের পরিচালন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। পরিদর্শন শেষে ২৭ আগষ্ট সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ দল কেন্দ্রটির পরিচালনাকারী কর্তৃপরে নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারের প্রশংসাও করেছে। তবে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরও উন্নতির পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি বিশেষজ্ঞ দল।

আইএইএ-এর ওয়েবসাইট প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত পাবনার রূপপুরে এই ‘প্রাক-পরিচালনা সুরক্ষা পর্যালোচনা মিশন’ পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে আয়োজিত এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে এর পরিচালন সুরক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করা।

বিশেষজ্ঞ দলটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের জ্ঞান, পেশাদারিত্ব এবং পরিচালন নিরাপত্তা উন্নত করার দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছে। কেন্দ্রটির কর্মীদের সাথে আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করে তারা জানিয়েছেন, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার মান আরও বাড়ানো সম্ভব।

আইএইএ এর সিনিয়র নিউক্লিয়ার সেফটি অফিসার সাইমন মরগ্যান বলেন, কমিশনিং পর্যায় থেকে পরিচালন পর্যায়ে যাওয়া একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এই রূপান্তরটি নিরাপদে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রূপপুরের ব্যবস্থাপনা ‘চমৎকার’ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ দলটি বলেছেন, যা বিশ্বের অন্যান্য পারমাণবিক শিল্পের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। বিশেষ করে, ফুয়েল রিফুয়েলিং মেশিনের কার্যক্রম পরিচালনার প্রশিক্ষণের জন্য স্টেট-অব-দ্য-আর্ট সিমুলেটর (সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) ব্যবহারের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

তবে, সুরক্ষা আরও জোরদার করার জন্য মিশনটি কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: অগ্নি ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অগ্নি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা; বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালন মান এবং আচরণ উন্নত করা; কমিশনিং পর্যায়ে বিভিন্ন সিস্টেম ও যন্ত্রাংশের সঠিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ তার প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পরিচালন নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইএইএ এর নিরাপত্তা মান মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এই প্রি-ওএসএআরটি মিশনে অংশ নেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক পর্যালোচনা দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

বিশেষজ্ঞ দলটি তাদের পর্যালোচনার একটি খসড়া প্রতিবেদন কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার কাছে হস্তান্তর করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে জানা গেছে।

পরিদর্শনের শেষে বুধবার (২৭ আগষ্ট) চুড়ান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হেসেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মজিবুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক ড. মো. কবির হোসেন, নিউক্লিয়ার পাওয়া প্লান্ট কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসানসহ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার এতমস্ত্রয় এক্সপোর্ট এবং প্রকল্পের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসংগত: রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ঈশ্বরদীর রূপপুরে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে। চুক্তি নবায়নের পর প্রথম ইউনিট হস্তান্তরের সময় ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিটের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

(এসকেকে/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০২৫)