রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারে সুনীল মন্ডলের জমিতে  অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ সব ধরণের জবরদখল কাজ স্থগিত করলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি ) অমিত কুমার বিশ্বাস। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: মঈনুল ইসলাম মঈন এর নির্দেশে চম্পাফুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৬ টায় সব ধরণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য ৩টি হত্যা ও একটি ধর্ষণ মামলার আসামি সামাদ গাজী এবং তার ছেলে আলমগীর কবীরকে নির্দেশ দেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল মৌজার ১০০৫ দাগের ৩ বিঘা অর্পিত সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে ২০১৮ সালে মালিকানা পান চম্পাফুল গ্রামের সন্ন্যাসী মন্ডলের ছেলে সুনীল মন্ডল। একই এলাকার কমল মন্ডল ও তার ছেলে তাপস মন্ডলের কাছ থেকে কয়েকটি জাল দলিল এর মাধ্যমে জমির মালিকানা দাবি করে আসছিলেন বেলায়েত গাজীর ছেলে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর। ২০১২ সালে সুনীল মন্ডলের উপর নির্যাতন চালিয়ে ঐ জমির সাড়ে ১৬ শতক দখল করে সেখানে জোর পূর্বক রাইস মিল তৈরি করেন সামাদ গাজী। ঐ রাইস মিলসহ সাড়ে ১৬ শতক জমি ফিরে পেতে সুনীল মন্ডল কালীগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দেঃ- ৪৮৮/২১ নং উচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় সুনীল মন্ডল, তার স্ত্রী মাধবী মন্ডল, কালীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি)অফিসের কানুন-গো চম্পাফুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার এবং সর্বশেষ জবরদখলকারীর পক্ষে আলমগীর কবির গত ২৪ আগষ্ট আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর ২ সপ্তাহ আগে কমল মন্ডল ও তার স্ত্রী অমৃতা মন্ডলকে অজ্ঞাত স্থানে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের ঘর দখল ও ১৮ আগষ্ট সোমবার থেকে সুনীল মন্ডলের আড়াই বিঘা জমি জবরদখলের কাজ শুরু করেম সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর। বিষয়টি নিয়ে সুনীল মন্ডল এর লাগানো ১০ টি প্রজাতির ফলজ ও বনজ শতাধিক কাজ কেটে সাবাড় করে, ফল ও সবজি লুট করে সামাদ গাজী। এ কাজে ভাড়া করা হয় ৪০-৫০ জন স্বশস্ত্র সন্ত্রসী। ১৯ আগষ্ট উচ্ছেদের মামলায় আলমগীর কবীরের পক্ষের আইনজীবী এড. তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুনীল মন্ডলের জমি আলমগীর কবিরের দখল দেখিয়ে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ঘটনাস্থলে শান্তি রক্ষার্থে যাওয়া ২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।

এক পর্যায়ে আদালত কেবলমাত্র বিবাদী পক্ষের একতরফা শুনানী শেষে এসআই সাব্বির আহমেদ ও সিপাহি কামরুল ইসলামকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানর নির্দেশ দেন। এতে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর উৎসাহিত হয়ে বেশি সন্ত্রাসী ভাড়া করে ২০ আগস্ট জবরদখলকৃত সুনীল মন্ডলের জমিতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। একই সাথে সুনীল মণ্ডলের ঘরের চারিধারে বিশেষ করে টিউবওয়েল ও তুলসীবেদীতে প্রবেশসহ ঘরবাড়িতে ঢোকার রাস্তা বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন।এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সুনীল মন্ডল পরিবার।

গত ২৪ আগস্ট উচ্ছেদের মামলায় বিবাদী পক্ষে সাক্ষী দেন আলমগীর কবীর। তাছাড়া অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তকরণ সম্পর্কিত সুনীল মণ্ডলের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (রাজস্ব ) আদালতে দায়েরকৃত ৫৭/২০২৩ নং মামলায় গত ২৭ আগস্ট ধার্যদিনে জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে বেড়া দেওয়া ও ঘর নির্মাণের বিষয়টি স্থির ছবি ও ভিডিওসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কাছে উপস্থাপন করেন সুনীল মন্ডলের আইনজীবী এড.কল্যাণ মন্ডল।

এ সময় বিবাদী আলমগীর কবীর আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক মঈনুল ইসলাম মঈন বিবাদী পক্ষকে ঐ জমিতে কোনো প্রকার দখলদারিত্ব ও নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য আলমগীর কবীরকে নির্দেশ দেন। একইসাথে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনারের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ঐ জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য কালীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দেন।বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৬ টায় আদালতের আদেশ পেয়ে কালীগঞ্জ সহকারী কমিশনার ( ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস চম্পাফুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে সুনীল মন্ডলের দখলীয় জমিতে সব ধরণের অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে আলমগীর কবীর জানান,আদালতের নির্দেশনা পেয়ে তারা সকল প্রকার কাজ বন্ধ রেখেছেন।

কালিগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস জানান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব)
এর নির্দেশে বৃহষ্পতিবার সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্তয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০২৫)