ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তাদের সামাজিক সমাবেশ (মিলনমেলা) চলমান অবস্থায় বর্তমান কর্মকর্তাদের দ্বারা সুকৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। নিউ ইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলের মিলনায়তনে গত রবিবার (২৪ আগস্ট) এ ঘটনাটি ঘটে। এ সামাজিক সমাবেশে আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ আগত অতিথিদের জন্য নৈশ্যভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রায় দুই শতাধিক অতিথি উক্ত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চলমান অনুষ্ঠান বর্তমান কর্মকর্তাদের দ্বারা সুকৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আপসোস করছেন অনেকেই।

প্রায় এক ঘন্টা বিলম্বে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানের সূচনা ছিল অত্যন্ত চমৎকার। সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়ার পরিচালনায় মিলনমেলার সদস্য সচিব বাবুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় যথারীতি চলছিল এ অনুষ্ঠান। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বর্তমান কমিটিতের কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে প্রবেশের পর। সোসাইটির বর্তমান কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ প্রবাসের চারজন পরিচিত সন্ত্রাসীকে নিয়ে অবাধে এবং বিনা নিবন্ধনে মিলনায়তেনে দেশি স্টাইলে প্রবেশ করান। তাদেরকে বিভিন্ন দরজায় নিয়োগ করেন যাতে ভিতরে অবস্থানরত সাংবাদিক ছাবেদ সাথী বেরোতে না পারেন।

অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির বিভিন্ন কমিটি, সোসাইটির ট্রাস্টি ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন একের পর এক। তবুও বাদ পড়েন অনেকেই। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। বিপত্তি ঘটে যখন নির্ধারিত বক্তাদের তালিকা বহির্ভূতভাবে বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি বক্তব্য দিতে গেলে মিলনায়তনের ডান পার্শে বসা সাবেক কর্মকর্তা আমিনুল চৌধুরী ও রুহুল আমিন সিদ্দিকীসহ অনেকেই প্রতিবাদ জানাতে দাঁড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় হট্টগোল। হোটেলের মিলনায়তনে নিরাপত্তাকর্মীরা এলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সোসাইটির বর্তমান সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বিশেষ ব্যবস্থায় বক্তব্যের সুযোগ পেয়ে তিনি নিজের ইচ্ছাতেই বর্তমান কমিটির সকলকেই একে একে মঞ্চে ডেকে তুলে পরিচয় করিয়ে দেন। ফলে সাবেক কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তারা পৃথক পৃথক বক্তব্যে আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোসাইটির জন্য কাজ করার আহবান জানান। প্রয়োজনে সম্মিলিতভাবে সোসাইটিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সোসাইটির ভবন তথা কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সহযোগিতাও কামনা করা হয়। সাবেক কর্মকর্তাদের এ সামাজিক সমাবেশ (মিলনমেলা) কোনরকম দ্বিধা বিভক্ত কিংবা বর্তমান সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয় বলে উল্লেখ করেন মিলনমেলার আহবায়ক ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া। সোহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কাজ করার আহবান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মিলনায়তনের বাইরে প্রবাসের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রসী দল ফিল্মী স্টাইলে আমন্ত্রিত সাংবাদিক ছাবেদ সাথীকে দলবদ্ধভাবে আক্রমণের পর হামলা ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরে অপরাধীদের পাল্টা অভিযোগে সাংবাদিক ছাবেদ সাথীকে হোটেল লবি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

অনুষ্ঠানে সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. এম বিল্লাহ, ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, মোহাম্মদ আক্তার হোসেন, নার্গিস আহমেদ, আজমল হোসেন কুনু ও মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হামিদ রেজা খান, একে এম ফাজলে রাব্বী ও রানা ফেরদৌস চৌধুরী, বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ, বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, ডা. ফারুক আজম প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। যৌথভাবে সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সোসাইটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামান তপন। মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ফজলে রাব্বি।

মিলনমেলা উপলক্ষে ‘অনুরণন’ শীর্ষক একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হয়। ফিতা কেটে এর মোড়ক উন্মোচন করেন মিলনমেলার আহবায়ক ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া। এসময় প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির চেয়ারম‍্যান ও ‘অনুরণন’ সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম ও তার সম্পাদনা পরিষদের সদস‍্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সোসাইটির সাবেক ৪ সাংস্কৃতিক সম্পাদক যথাক্রমে চমন আরা বেগম, স্বপ্না কাওসার, মনিকা রায় চৌধুরী ও ডা. শাহনাজ লিপি, নাট্য সম্পাদক শেখ সিরাজ এবং আমন্ত্রিত শিল্পী রুনা রায় সম্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত ও ডি এল রায়ের লেখা ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে একক সংগীত পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত সংগীত শিল্পী লীনা তাপসী। তিনি একে একে ৪টি গান পরিবেশন করেন। যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন মাসুদুর রহমান (কি-বোর্ড) ও খুশবু আলম (তবলা)।

(আইএ/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২৫)