মোংলা-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ, বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা
.jpg)
সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : দেশের জনগুরুত্বপূর্ন এন-৭ জাতীয় মহাসড়ক মোংলা-খুলনা এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। মোংলা বন্দর, ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চাল ও সুন্দরবনের পর্যটকদের যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম জাতীয় এই মহাসড়কটি বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে ছোট-বড় অসংখ্য খাদাকন্দে পরিনত হয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি ৪১ কিলোমিটার অংশ পড়েছে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের অধিনে। এরমধ্যে কাটাখালী মোড় থেকে তেঁতুলিয়া সেতু ও দ্বিগরাজ রেলক্রসিং থেকে মোংলা ফেরিঘাট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা এখন সব থেকে বেশি খারাপ। কোনো কোনো গর্তের গভীরতা দাঁড়িয়েছে দেড় ফুটের বেশি। খানাখন্দের পাশাপাশি মহাসড়কের অনেক স্থান উচু-নিচু হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির হলেই পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায় আরও নাজুক। প্রায়ই খানাখন্দে পড়ে বাস-ট্রাকসহ আমদানী-রপ্তানীমুখি পন্য বোঝাই লড়ি ও কাভার্ডভ্যান আটকে পড়ছে। এছাড়া এই মহাসড়কের মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫ কিলোমিটার এলাকায় সড়কজুড়ে জমে থাকা কাদাপানির কারণে পথচারীদের হেঁটেও চলাচল করতে পাছেনা। এই অবস্থায় মহাসড়ক মরণফাঁদে পরিনত হওযায় মোংলা বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ ও আমদানী-রপ্তানী পণ্য পরিবহনও চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
আজ রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোংলা ফেরিঘাট থেকে রামপাল পাওয়ার প্লান্টের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল চরম ভাবে বিঘিœত হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, মোংলা-খুলনা এখন মরণফাঁদে পরিনত হওয়ায় আমাদের মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানী-রপ্তানী বানিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’
ট্রাক চালক করিব হোসেন ও কাভার্ডভ্যান চালক খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রদিতিন মোংলা বন্দরের আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহী শত শত ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ কয়েক হাজার যাতায়াত চলাচল করে। কিন্ত বছরের পর বছর সংস্কার না করায় এখন প্রায়ই যানবাহন গাড়ি গর্তে আটকে গিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তি বাড়ছে। মোংলা বন্দর থেকে পণ্য আনা নেয়া করতে গেলে এখন মনে হয় ট্রাকের চাকা ভেঙে যাবে। মহাসড়কের এই অবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে’।
মোংলা বন্দর এলাকার বসুন্ধরা সিমেন্ট ফেক্টরীতে কর্মরত রেজাউল করিম রনি বলেন, ‘এই মহাসড়ক দিয়ে চলতে গেলি কাদাপানি লেগে যায়, গোসল না করে কোথায় বসা যায়না। একটা বড় গাড়ি যখন যায়, কাদা পানি এসে গায়ে লাগে। ভ্যান বা ইজিবাইকে করে যে চলবেন, তারও কায়দা নেই। পায়ে হেটে চলারতো প্রশ্নই আসেনা।’
বাগেরহাট সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এই জাতীয় মহাসড়কের অধিকাংশ জায়গায় দুই পাশে, কোনো কোনো জায়গায় এক পাশে মাছের ঘেরে পানিবদ্ধ থাকে। বর্ষা মৌসুমে ঘেরের পানি বাড়ে। ওই সময় পানির ধাক্কায় মাটি-বালু সরে যাচ্ছে। ফলে মহাসড়ক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকা বসে যায়। এখানে যানবাহনের চাপও অনেক বেশি। ইট খোয়া দিয়ে আপাতত গর্তগুলো ভরাট করে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাখছি। বৃষ্টি কমলে পাথর-বিটুমিন দিয়ে মহসড়ক সংস্কার করা হবে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) এ কে এম আনিসুর রহমান ইসলাম বলেন, ‘মোংলা ফেরিঘাট থেকে দিগরাজ পর্যন্ত সড়ক বন্দরের আওতাধীন। অতিবৃষ্টির কারণে মহাসড়কের অবস্থা খারাপ হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়ানে সড়ক সংস্কারে টেন্ডারের ওয়ার্ক অডার হয়েছে। অতি দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, মোংলা-খুলনা এন-৭ জাতীয় মহাসড়কের ৪১ কিলোমিটার অংশ পড়েছে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের অধিনে। এরমধ্যে কাটাখালী থেকে দ্বিগরাজ পর্যন্ত সড়কের কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। বর্তমানে গর্তগুলো ভরাট করে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাখা হচ্ছে। পাথর-বিটুমিন দিয়ে মহসড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। দেশের জনগুরুত্বপূর্ন এই মহাসড়কটি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে চার লেনে উন্নত করনের প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
(এস/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২৫)