সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : ১২০ টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো ৫০ জন চাকরি প্রার্থীর। পুলিশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে নিজেকে যোগ্য মনে করে চাকরির জন্য ১২০ টাকা দিয়ে  অনলাইনে আবেদন করেন  হাজার হাজার চাকরি প্রার্থী। এরমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের জন্য টাঙ্গাইল জেলা থেকে আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কর্তৃক পুরুষ ৩,০৭৩ জন ও নারী ২৩৯ জনসহ মোট ৩,৩১২ জন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বাছাই করা হয়।

এরপর শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইয়ের পর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১,৫০৩ জন ও নারী ৪৮ জনসহ মোট ১,৫৫১ জন প্রার্থী শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৭৬৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৮৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮৬ জনের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫০ জন প্রার্থী টিআরসি পদে নিয়োগযোগ্য এবং ১০ জন অপেক্ষমান হিসেবে বিবেচিত হন।

রবিবার রাতে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস গ্রিলশেডে ফলাফল প্রকাশ করেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এ সময় ৫০ জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছেন । 'চাকরি পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বা মামা-খালুর জোর না থাকলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় না!'- এমন সমালোচনার মুখে ছাই এঁটে দিয়েছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। মেধা ও যোগ্যতাই চাকরি পাবার মূল চাবিকাঠি -তা প্রমাণ করে টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে ৫০ জনের চাকরি নিশ্চিত করেছে জেলা পুলিশ ।

টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান মাত্র ১২০ টাকায় ৫০ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

পুলিশে চাকরি পাওয়া হাসিবুল, মিলি, রোকসানা, মিলন ও সানি বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমরা ৫০ জন উত্তীর্ণ হয়েছি। জন্মের পরেই শুনে এসেছি পুলিশের চাকরি পেতে ‘ঘুষ কিংবা মামা ও খালার জোর ছাড়া হয় না’। এই প্রথম আমরা দেখতে পারলাম নিজের যোগ্যতায় কোনো টাকা ছাড়াই শুধু ১২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে। এ বিষয়টি শুনে আমাদের মা-বাবাও অনেক খুশি। আমরাও অনেক আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমাদের অনেকের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে কৃষি কাজ করে। দিনমজুরি খেটে আমাদের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে।যদি বাবা-মা ও দেশবাসীর সেবা করে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি তবেই আমাদের গর্ব।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, কঠোর পরিশ্রমের পর একদম স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। লিখিত ও ভাইভা শেষে ৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মেধা অনুযায়ী অপেক্ষমাণ ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের চাকরি হয়েছে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে মেডিকেল পরীক্ষার পর তাদের ট্রেনিং করার জন্য নির্ধারিত পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হবে। আশা করি নতুন সদস্যরা পেশাদারত্বের সাথে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন।

(এসএএম/এএস/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৫)