রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি: ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী এই দুটি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ (সালথা নগরকান্দা) আসনে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার সকাল থেকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়ক এবং ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের দুটি পয়েন্ট বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করছেন স্থানীয়রা। এতে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে দক্ষিণ অঞ্চলের অন্তত ১৬ জেলার যানবাহন আটকা পড়েছে।

ভাঙ্গাকে ভাঙার সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানবেনা ভাঙ্গাবাসী বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এটি একটি হটকারি সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করছেন ভাঙ্গা থানার আন্দোলনকারী জনগণ।

বিক্ষোভকারীরা এতোটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে, কাউকে কাউকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে, কেউ চিৎকার করে বলতে থাকেন মরে যাবো তবুও ভাঙ্গা ছাড়বোনা। এসময় ভাঙ্গা থানার আলগী ইউনিয়নের সোনাখোলার জনগণ বলেন, ভাঙ্গা পৌরসভা এলাকার সাথে লাগানো ইউনিয়ন আলগী, এই আলগী ইউনিয়ন কেনো ভাঙ্গা থানা থেকে আলাদা হবে? এটি নিশ্চিত কোনো গভীর ষড়যন্ত্র অংশ বলেও উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাওয়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রোকিবুজ্জামান উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'আজ (শুক্রবার) সকাল ৮টা থেকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের দুটি পয়েন্ট পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও ঢাকা মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন গ্রামবাসীরা।

ওসি আরও জানান, ভাঙ্গার দুইটি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ভাঙ্গার থানার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত তারা মহাসড়ক থেকে সরবেন না। এতে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ভাঙ্গা থানা ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা জানান, 'আমাদের গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে আমাদের মা-মাটিকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ঘটনা তারা কোনোভাবেই মানবে না ভাঙ্গাবাসী। তাদের দাবি পুনরায় তাদের গ্রাম ভাঙ্গা উপজেলার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এবং এটি দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি নামবে ভাঙ্গার জনগণ।

পরে, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দেন যে, অতি শীঘ্রই ভাঙ্গাবাসীর দাবি পুনর্বিবেচনা করার ব্যাপারে তাঁর উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের কথা হয়েছে, তারা আশ্বস্ত করেছেন আপনাদের। আপনারা রাস্তা ছেড়ে দিন, আমি আপনাদের সাথে আছি। এছাড়া, তাদের মধ্যে এসব বিষয়ে আরও বেশকিছু কথাবার্তার পর বিক্ষোভকারীদের সন্তুষ্ট হলে মহাসড়ক ছাড়েন ভাঙ্গাবাসী। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মুক্ত হয় ভাঙ্গার দিয়ে চলাচল করা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্তত ১৬ জেলার জনগণ।

তবে, তা বেশিক্ষণ স্থানী হয়নি। মাত্র চার ঘন্টা বিরতি'র পর শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ শুরু করেছে ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের জনগণ। এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ভাঙ্গার স্থানীয় একাধিক অম্বলের জনগণ।

এই রিপোর্ট লেখার সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রোকিবুজ্জামান উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, 'বিকেল চারটা থেকে এখন পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে আলগী ইউনিয়নবাসী। আগের আন্দোলনকারীদের সাথে তবুও কথা বলা গেছে এদের সাথে তো কথা বলা যাচ্ছেনা। এদের সবাই নেতা এবং সংখ্যায়ও অনেক বেশি। জানিনা কি হবে, আমি আমার উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিও একই বক্তব্য দিয়েছেন।

এই রিপোর্ট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অবরোধ চলছিলো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আশ্বাস ছাড়া মহাসড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন তারা। এতে আবারও ভাঙ্গা মহাসড়কে আটকা পড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্তত ১৬ জেলায় চলাচলকারী যাত্রীরা।

(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৫)