বোয়ালমারীতে আওয়ামী লীগের একাধিক অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করে করেছে বোয়ালমারী থানা পুলিশ।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ মামলায় বোয়ালমারী পৌর যুবলীগ ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ফরিদপুর ১ আসনের অন্তর্ভুক্ত বোয়ালমারী থানায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী বিশেষ করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হতে দেখা গেছে। পতিত সরকারের উপজেলার কর্মীদের তৎপরতা আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বোয়ালমারী থানায় এ মামলা করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে বোয়ালমারি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে এই মামলাটি (মামলা নং ৫) করেন। স্থানীয় উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের ৭২ জন, উপজেলা ও পৌর যুবলীগের ৩ জন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ জন এবং উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের ১ জন সহ মোট ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আওয়ামী লীগ সহ এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের আরও ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামী দেখিয়ে এ মামলাটি করেন ওই থানার এসআই শফিকুল আলম। এছাড়া মামলাটিতে যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বোয়ালমারী থানা পুলিশ, তারা হলেন- ওই মামলার ১ নম্বর আসামি ও বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ আব্দুল গফফার বিশ্বাস (৩৯) পিতা মৃত এলেম বিশ্বাস এবং মামটাটির দুই নং আসামী ও বোয়ালমারী পৌরসভা আওয়ামী যুব লীগের সদস্য রকিবুল ইসলাম রকি (৩৬) পিতা হাফিজুর রহমান। আটকের পর গত বৃহস্পতিবার আসামীদ্বয়কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়ে্। এই বিশেষ মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) দেওয়ান শামীম খান।
উপরোক্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'বোয়ালমারী থানা এলাকায় সরকার বা রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ সহ কোনো ধরণের সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নাই।'
এছাড়া, নির্বাচনের আগে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বোয়ালমারী থানা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান ওসি মাহমুদুল।
মামলার সূত্র বলছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বোয়ালমারী উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের প্রায় সকল একটিভ নেতাকর্মীর মধ্যে মোট ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া, ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকা ছাড়া বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ গালিবুর রহমান ওরফে গালিভ মিঞা, তুষার ও গ্রেপ্তারকৃত রাকিবুলকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে।
মহস্যজীবী লীগের একমাত্র আসামী (গ্রেপ্তারকৃত) সংগঠনটির পৌর শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ আব্দুল গফফার বিশ্বাস।
স্থানীয় সূত্রমতে, উপজেলা ও পৌরসভার দেয়ালগুলোতে দেখা গেছে 'ইউনূস হটাও মানুষ বাঁচাও', 'শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে' প্রভৃতি স্লোগান সম্বলিত দেয়াল লিখন, যা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে চোখে পড়ছে।
এদিকে, সেপ্টেম্বরের ২/৩ তারিখ থেকে বোয়ালমারীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছাত্রলীগের পোস্টার, ব্যানার দেখায় যায়। 'শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে', 'ইউনূস হটাও দেশ বাঁচাও', ইত্যাদি স্লোগান সহ উপজেলা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাদের নাম, পদবি ও ছবি ব্যবহার করা হয়। যা আগের লেখাগুলোতে দেখা যায়নি।
এরপর পরই অভিযানে নামে বোয়ালমারী থানা পুলিশ এবং ওই অভিযানেই গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেপ্তার হন- বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ আব্দুল গফফার বিশ্বাস (৩৯) এবং বোয়ালমারী পৌরসভা আওয়ামী যুব লীগের সদস্য রকিবুল ইসলাম রকি (৩৬)। যারা গত বৃহস্পতিবার থেকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে হওয়া বোয়ালমারী থানার এ মামলায় প্রধান দুই আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার ও একই দিনে আদালতের মাধ্যমে মাধ্যমে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে জানিয়েছে বোয়ালমারী থানা পুলিশ।
(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫)