রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা বাজারের পেরিফেরি জমিতে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে বহুতল  ভবন নির্মাণ কাজ। গত সাত মাসে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের ছাদ নির্মাণ করিয়ে সহযোগিতার নামে তহশীলদার আকরাম হোসেন  তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও একটি রাজনৈতিক দলের দুই গ্রপের নেতাদের ম্যানেজ করার নাম করে কমপক্ষে কোটি টাকা পকেটস্ত করেছেন। এমনকি তিনি ২০১৮ সালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নির্দেশ অমান্য  করে জগন্নাথ দেবের মন্দিরের জায়গায় তারেক হাসান নামের এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক জমি দখল করার সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝাউডাঙা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ি ও এক বিএনপি নেতা জানান, গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তণ হওয়ার পর একটি বড় রাজনৈতিক দলের দুটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে ঝাউডাঙা বাজারে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে। ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার নারী হওয়ায় তিনি মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। তার সময় থেকে বাজারে শুরু হয় নিয়ম বহির্ভুতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ। একপর্যায়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে বদলী হয়ে আসেন তহশীলদার আকরাম হোসেন। তিনি তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বিশেষ করে সহকারি কমিশরার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে দোন পিছু দুই থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা তোলা শুরু করেন। এর একাংশ তিনি একটি রাজনৈতিক দলের গোবিন্দকাটি কেন্দ্রিক নেতাদের দেওয়ার কথাও বলেন। এরপর থেকে থেমে নেই অবৈধ নিমাণ কাজ। তহশীলদার আকরাম হোসেন রয়েছে বহাল তবিয়তে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে ঝাউডাঙা বাজারে যেয়ে দেখা গেছে, জাকির হোসেনের পপুলাল ফার্মেষীতে দ্বিতল ও ত্রিতল ভবন, ডাঃ মজিদের কাপড়ের দোকানের ছাদ, আজিজ কলুর পলিথিন ও দড়ি বিক্রির দোকান, বাবলুর কাপড়ের দোকানের ভবনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। একই ভাবে জগন্নাথ মন্দিরের জায়গায় মন্দিরের সামনে ট্রাকের কভার রেখে বাজার কমিটির সভাপতি শাহজাহানের ভাই পাথরঘাটার তারেক হাসান কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

ইশারা করে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জানান, রাজনৈতিক দলের নেতা ও তহশীলদারের হুমকিতে এসব অবৈধ নির্মাণে কাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। তবে তার বলেন, একটি একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে তহশীলদার দুই থেকে তিন লাখ টাকা তুলে পকেটস্ত করেছেন।

জগন্নাথ দেব মনিদর কমিটির সভাপতি সন্তোষ ঘোষ জানান, ২০১৮ সালে দক্ষিণ পাথরঘাটার হাসান তারেকসহ আটজন স্থানীয় তহশীলদারকে ম্যানেজ করে রায় ও ডিক্রী থাকা মন্দিরের কিছু জমি ডিসিআর নেন। তারা ওই জমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানাতে চাইলে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দেন। একই সাথে তারা বিষয়টি তৎকালিন সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) দোবশীষ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) অবহিত করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই ডিসিআর বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসাথে ওই জমিতে যাতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা না হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি ডিসিআর গ্রহীতারা পিছু হটে। কিন্তু গত বছরের ৫ আগষ্টের পর দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় ও বড় ভ্ইা শাহজাহান আলী ঝাউডাঙা বাজার কমিটির সভাপতি হওয়ায় হাসান তারেক ঝাউডাঙার তহশীলদার আকরাম হোসেনকে ম্যানেজ করে সম্প্রতি মন্দিরের জায়গায় তার পূর্বের ডিসিআর মূলে ট্রাকের কভার বসিয়ে তার মধ্যে রেডিমেড পোশাক রেখে ব্যবসা শুরু করেন। বাধা দেওয়ায় তিনি দোকান না খুললেও ট্রাকের কভার দিয়ে জায়গা দখলে রেখেছেন। বিষয়টির নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের ভিন্ন ব্যাখা দিয়ে চলেছেন আকরাম হোসেন। প্রতিবাদ করায় মন্দির সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন ওই তহশীলদার।

এ ব্যাপারে ঝাউডাঙা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহজাহান আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার আকরাম হোসেন ঝাউডাঙা বাজারে বহুতল ভন নির্মাণের কাজ অস্বীকার না করেই বলেন, কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন সূযোগ নেই। জানতে হলে তার অফিসে আসতে হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫)