তেল কেনা বন্ধ করলেই রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত তবে সেটা তিনি তখনই করবেন যখন ন্যাটো দেশগুলো কিছু শর্ত পূরণ করবে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ন্যাটো দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে হবে। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, ন্যাটো দেশগুলো যখন একমত হবে এবং বাস্তবে পদক্ষেপ নিতে শুরু করবে তখনই তিনি ‘রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রস্তুত।’
ট্রাম্প বারবার মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। ক্রেমলিনও তার সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করছে।
তিনি রাশিয়ার তেল কেনাকে ‘চমকপ্রদ’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং ন্যাটো দেশগুলোকে চীনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, এটা রাশিয়ার ওপর চীনের ‘শক্ত নিয়ন্ত্রণ’ দুর্বল করবে।
ন্যাটো দেশগুলোকে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, আমি প্রস্তুত। তোমরা যখন বলবে তখনই শুরু করব। শুধু সময় বলো। তিনি আরও বলেন, কিছু দেশ এখনো রাশিয়ার তেল কিনছে, যা সত্যিই চমকপ্রদ! এটি রাশিয়ার সাথে তোমাদের দরকষাকষির অবস্থান এবং প্রভাবকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করা এবং চীনের ওপর ভারী শুল্ক আরোপ (যুদ্ধ শেষে যা তুলে নেওয়া হবে) এই সংঘাত দ্রুত শেষ করতে বড় সহায়ক হবে। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নাটকীয়ভাবে কমেছে।
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় ৪৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে নিত। চলতি বছর তা কমে প্রায় ১৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্পের মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, তিনি মনে করেন এই হ্রাস যথেষ্ট নয়।
ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েন বাড়ার মধ্যেই ট্রাম্পের এই বার্তা এসেছে। বুধবার এক ডজনেরও বেশি রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
পোল্যান্ড এই অনুপ্রবেশকে ইচ্ছাকৃত বলে দাবি করেছে। তবে মস্কো ঘটনাটিকে গুরুত্ব কমিয়ে দেখিয়েছে এবং জানিয়েছে, তারা পোল্যান্ডের কোনো স্থাপনা টার্গেট করার পরিকল্পনা করছে না।
ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও জার্মানি ন্যাটোর নতুন মিশনে যোগ দিয়েছে এবং পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে সেনা ও সরঞ্জাম পাঠাবে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা বন্ধের আহ্বান জানান।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের রাশিয়া থেকে যেকোনো ধরনের জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে। আর শুধু জ্বালানি নয়, রাশিয়ার সাথে যেকোনো ধরনের চুক্তি বন্ধ করতে হবে। যদি আমরা তাদের থামাতে চাই, তবে কোনো রকম চুক্তি রাখা যাবে না।
২০২২ সাল থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো (১৮২ বিলিয়ন পাউন্ড) রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনেছে বলে জানিয়েছে থিংকট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার। এই অর্থের বড় অংশই ইউক্রেনে যুদ্ধের অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা পুরোপুরি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায় এটা আরও দ্রুত হোক-আংশিকভাবে যাতে তারা নিজস্ব সরবরাহ বিক্রি করতে পারে।
ট্রাম্পের বার্তা ছিল ন্যাটোকে উদ্দেশ্য করে, শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নয়। অর্থাৎ এর মধ্যে তুরস্কও রয়েছে, যারা রাশিয়ার বড় ক্রেতা এবং ন্যাটোতে থেকেও মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
তুরস্ককে রাশিয়ার সরবরাহ বন্ধে রাজি করানো আরও কঠিন হতে পারে। চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ইউক্রেন হামলার পর ট্রাম্প সর্বশেষ কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কী ‘দ্বিতীয় ধাপের’ শাস্তির পদক্ষেপের প্রস্তুত কি না। ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত।’ তবে তিনি কোনো বিশদ তথ্য দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল যার মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল রাশিয়ার সাথে লেনদেনের জন্য। রাশিয়া তেল বিক্রির অর্থ ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যয় করছে বলে মনে করে ওয়াশিংটন।
(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)