স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : জমে উঠেছে যশোরের দুই শতাধিক বছরের পুরানো বলুহ দেওয়ান এর মেলা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাঠে ভিড় লেগেই থাকছে। দূর দূরন্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণা ও বিক্রেতাদের হাক ডাকে জমজম করছে মেলার মাঠ। ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ১০ দিনব্যাপি এই মেলা চলবে আগামি ১৮ সেপ্টেম্বর।

কপোতাক্ষ নদের পাড়ে অবস্থিত হাজরাখানা গ্রাম। এই হাজারখানা গ্রামে কয়েক হাজার বছর আগে বসতি স্থাপন করেছিলেন পীর বলুহ দেওয়ান (র:)। লোকমুখে তার অলৌকিক ক্ষমতার নানা গল্প প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, তিনি গরু চরাতে গিয়ে গরুকে সাদা বক বানিয়ে গাছের ডালে বসিয়ে রাখতেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ধান সিদ্ধ করার সময় খড়ির পরিবর্তে নিজের পা উনুনে ঢুকিয়ে দিতেন।

বিখ্যাত সেই বলুহ দেওয়ান স্মরণে যশোরের চৌগাছার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজারখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বলুহ দেওয়ানের ওরশ এবং গ্রামীণ মেলা। পীর বলুহ দেওয়ান (র:)-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো। এই মেলাকে ঘিরে হাজারখানা গ্রাম এখন উৎসবের আমেজে মুখরিত।

স্থানীয়রা বাসিন্দা মিঠু আহমেদ বলেনন, বলুহ দেওয়ানের মেলা উপলক্ষে হাজারখানা গ্রামে আনন্দের জোয়ার নেমে আসে। গ্রামের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রতিটি বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনের ভিড় জমে। বহু বছরের পুরোনো এই মেলা নিয়ে এলাকায় উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

মেলার মাঠে আসা নূর মোহাম্মদ বলেন, সরকারি ছুটির দিনে মেলার মাঠে এসেছি। স্বপরিবারে মেলার মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মেলার পরিবেশ অনেক ভালো। বাচ্চার জন্য খেলনা কিনেছি। আমরা ঘোরাঘুরি করছি, খাওয়া দাওয়া করেছি।অনেক ভালো লাগছে।

শান্তা ইয়াসমিন নামে অন্য এক দর্শক বলেন, মেলা মানেই তো আনন্দ। অনেক মানুষের সমাগম হয়। বলুদ মেলায় আমরা প্রতিবছর আসি। এখানে অনেক দোকান বসেছে। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ অনেক খাবারের আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। নাগরদোলা চড়েছি। নদীতে স্প্রিড বোর্ট চড়লাম। অনেক মজা করেছি পরিবারের সবাই মিলে।

মেলা প্রাঙ্গণে গেলে দেখা যায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক সুন্দর প্রতিফলন। এখানে হরেক রকমের খাবারের দোকান বসেছে। এর মধ্যে আছে বাদাম, পেঁয়াজু, বাতাসা, গজাসহ নানা রকম খাবার। সেই সাথে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের খেলনা, কসমেটিক সামগ্রী, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র। বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, ডালা, চালুনি থেকে শুরু করে কাঠের তৈরি পিঁড়ি, জলচৌকি এবং মাটির হাঁড়ি, পাতিল, খেলনাও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে।

বিনোদনপ্রেমীদের জন্যও রয়েছে চমৎকার ব্যবস্থা। নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেন, স্লিপার, জাম্পার, ভূতের বাড়ি এবং নৌকা দোলার মতো মাধ্যমগুলো সকল বয়সী মানুষের মন জয় করছে।

দূর দূরন্ত থেকে পণ্য বিক্রি করতে আসা দোকানিরা বলছেন, মেলার মাঠের পরিবেশ ভালো। প্রত্যেক বছর তারা দোকান নিয়ে বসেন এখানে। তারা আশা করছেন, এবছর মেলায় কেনাবেচা ভালো হবে।


ঢাকা থেকে খেলনা বিক্রি করতে আসা ইয়াছিন আরাফাত বলেন, এবছর প্রথম যশোরের এই মেলায় এসেছি। অনেকের মুখে এই মেলার নাম শুনেছি। শুরুর দিকে ভালোই লোক সমাগম হচ্ছে। আশা করছি এবছর ভালো কেনা বেচা হবে।

মোহন ঘোষ নামে এক মিষ্টির দোকানি বলেন, ১৬ বছর ধরে এই মেলায় মিষ্টি বিক্রি করতে আসি। মেলা শেষে আবার নিজ জেলা নড়াইলে চলে যায়। প্রতিবছর কেনাবেচা ভালো হয়। এবছর মানুষের ভিড় বেশি। কিন্তু তেমন কেনাবেচা হচ্ছে না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কেমন কেনাবেচা হয়।

মেলার মাঠে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে স্থানীয় ভাবে মেলা পরিচালনা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনির সাথে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক টিম।

মেলা পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, এবছর বলুহ দেওয়ান মেলায় ৫ শতাধিক দোকান বসেছে। এখনও পর্যন্ত কোনো বিশৃংখলা বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ১০ দিন ব্যাপি ব্যাপি এই মেলা শেষ হবে।

(এসএমএ/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)