বিকাশ স্বর্নকার, সোনাতলা : বগুড়ার সোনাতলায় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, উন্নয়ন এর স্লিপের উঠানো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তথা আশপাশের লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাধাকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নাম হলো শিখা রানী বর্তমানে তিনি বদলী নিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার এক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। 

সরেজমিনে গেলে শিক্ষকরা জানান, দুই শিফটের এই বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ১টি পাকা ভবন ও টিন সেড ভবন।পাকা ভবনে রয়েছে অফিস সহ পাঠদানের দুইটি কক্ষ এবং টিন সেড ঘরের এক রুমে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের চলে পাঠদান। ওই বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রী রয়েছে ৯৮জন এরমধ্যে ৫ম শ্রেণীতেই ১৮জন। তবে টিনশেড রুমে গরমে ঘেমে পাঠদান চললেও নেই ফ্যানের ব্যাবস্থা। ফলে বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে অর্থ এলেও ঠিকঠাক মতো খরচ হয়না বলে জানান অনেকেই।

রাধাকান্তপুর বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে,গত জানুয়ারিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শিখা রানী। তিনি যোগদানের পর সরকারী ২টি স্লিপে নাকি তিনি ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রচন্ড গরমে গত ক'দিন আগে ক্লাস শেষে এক শিক্ষার্থী বাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের দাবি বিদ্যালয়ে সংস্কার সহ উন্নয়ন মুলক কাজের জন্য আসা প্রায় ৪৭ হাজার শিখা রানী খেয়ে ফেলেছেন।

তারাজুল নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে ছাত্রদের বিনোদোনের জন্য বসানো দোলনাটি থাকে তালায় আবদ্ধ।

৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুমায়রা, মরিয়ম, সিমান্ত বাবু, শাহারিয়ার সহ অনেকেই জানান, গরমের দিন গুলোতে ক্লাস রুমে লেখাপড়া করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। আমরা শিখা রানী ম্যাডামকে ফ্যানের কথা বললে তিনি আমাদের শাসিয়ে বের করে দেয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের খেলার ফুটবল পর্যন্ত নেই।

স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, শিখা ম্যাডাম এর সাথে কোন ব্যপারে কথা বলাই যেত না।

স্থানীয় আব্দুল বাকী বলেন, আমি জানতে পারি উন্নয়ন মুলক কাজের জন্য ৯০ হাজার টাকা এসেছিল।বিদ্যালয়ে এসে মাষ্টারদের কাছে জেনে সেটি নিশ্চিত হলাম। তাদের কাছ থেকে যেটুকু জানলাম শিখা রানী ৪৭ হাজার টাকা ও তার পুর্বের আরেক ভারপ্রাপ্ত হেড মাষ্টার ৪০ হাজার টাকা উন্নয়ন মুলক কাজ না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।

শিক্ষিকা শামিমা আক্তার ও তানিয়া বলেন, স্কুল চলাকালীন সময় অনেকেই এসে সরকারি বরাদ্দের টাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেহেদুল ইসলাম জানান, পূর্বের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শিখা রানী গত জানুয়ারি মাসে যোগদান করেন। তিনি বিদ্যালয়ের সংস্কার তথা উন্নয়ন মুলক কাজের জন্য দুই কিস্তিতে প্রায় ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেন মর্মে জানতে পারি। কোন ধরনের উন্নয়ন কাজ এই বিদ্যালয়ে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য ১টি ওয়াস রুমের খুবই প্রয়োজন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিখা রানীর সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

ওই বিদ্যালয়ের দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) রেজাউল করিমকে পুরা বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, রাধাকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শিখা রানী কিছু টাকা আত্মসাৎ করেছে এটি সত্য। তবে তার সার্ভিস বুক আমরা আটকিয়ে রেখেছি এবং তাকে চলতি সমস্যার সমাধান করতে বলেছি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ এনায়েতুর রশীদ কে বিস্তারিত ঘটনা বললে তিনি বলেন, আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিটিআই ট্রেনিংয়ে গেলে গত জানুয়ারিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিখা রানী ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর তিনি টাকা উঠিয়েছিলেন। আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে এরকম শুনেছি। তবে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লিপের অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।সেই সাথে আমি বিস্তারিত ঘটনা জেলা শিক্ষা অফিসার কে অবগত করেছি।

(বিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)