আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবকদের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে অভিভাবকের সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পরেছে। প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুলে এসে শিক্ষকদের কাছে তার সন্তানের পড়াশুনার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া।

অথচ বর্তমান সময়ে তার উল্টো ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাসে একবার অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করলেও তাতে অভিভাবকদের উপস্থিতি থাকে চরম হতাশাজনক। স্কুলের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষকরা তাদের ওপরের ক্লাশে ওঠাতে চাচ্ছেন না। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে অনুষ্ঠিত টেস্ট পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একাধিক বিষয়ে ফেল করায় তাদের ফরম পূরণ করতে শিক্ষকরা অসম্মতি প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিভাবকদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা প্রভাব বিস্তার করায় শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরমপূরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এ কারণেই শিক্ষাবোর্ডর পরীক্ষায় চরমভাবে ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে। অভিভাবকরা এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এ ফলাফল বিপর্যয় আরো চরম আকার ধারণ করবে।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরদের পড়ালেখার মানোন্নয়নে করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভার প্রধান অতিথি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন-মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে একজন প্রধানশিক্ষককে নেতৃত্ব, সু-ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কেন্দ্রীক শিক্ষাদান পদ্ধতি গ্রহণ, কার্যকর মূল্যায়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষক-অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সমন্বয়সহ পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন-প্রধানশিক্ষক প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে একটি সু-সংগঠিত ও সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন। শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন, পাঠদান ও মূল্যায়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত মাসিক সমাবেশ বা অন্যান্য বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করতে হবে।

কোন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর ফরমপূরণ থেকে প্রধানশিক্ষককে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেছেন-ষষ্ট শ্রেনী থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত ও মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেই কেবল শিক্ষার মানোন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডস্থ একটি রেস্তোয়ায় অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা মাধ্যমিক প্রধানশিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রধানশিক্ষকদের করণীয় ও স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম, অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আনোয়ার হোসেন খান, প্রধানশিক্ষক মো. অলিউল্লাহ, শিক্ষাবোর্ডের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার জাহিদুল ইসলাম পান্না, প্রধানশিক্ষক মো. গোলাম আজম, মো. মানিক হোসেন, কাজী মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক খোকন আহম্মেদ হীরাসহ অন্যান্যরা। বক্তারা শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫)