ভাঙ্গায় থানা ঘেরাও, গাড়ী ভাঙচুর, উপজেলা অফিসে হামলা, আগুন

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় থানা ঘেরাও, উপজেলা অফিসে হামলা ও আগুণ দেওয়া সহ থানার করেকটি সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙ্গায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফের সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। এসময় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ভাঙ্গা থানা ঘেরাও, নির্বাচন অফিস ও উপজেলা অফিসে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এসময়ে পুলিশের কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা করেন তারা। তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে তাদের এ শান্তিপূর্ণ দাবি আদায়ের আন্দোলনকারীদের শত্রু আখ্যায়িত করে, দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন আন্দোলনটির নেতৃত্ব থাকা সর্বদলীয় পরিষদের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬ টা থেকে সড়কে দখল করে অবরোধ না থাকলেও সকাল ১০টার পর ফের তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
এদিন সকালে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে অবরোধের পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
গত শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। রবিবার সকাল থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন তারা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সোমবার সকাল থেকে চলে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের সকল প্রকার যানবাহন। তবে সকাল সাড়ে ১০টার পর ফের তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, টানা কয়েকদিনের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচির কারণে কিছুটা স্থবির হয়েছে জনজীবন। তবুও তারা চায় ভাঙ্গাবাসীর দাবি পূরণ করুক সরকার।
কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, সকাল থেকে ভাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী অল্প সংখ্যক যানবাহন যাওয়া আসা করছে। টানা অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ হয়ে ২১টি জেলায় যাতায়াত করতে দেখা যায়নি।
ইউএনও মিজানুর রহমান জানান, সড়কের যানবাহন স্বাভাবিক রাখতে ভোর ৫টা থেকে ভাঙ্গা উপজেলা ও পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও মানুষের ভোগান্তি নিরসনে ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে থানার ওসি রোকিবুজ্জামান জানান, সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলছেও ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অবরোধকারীরা সব সড়ক বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'ভাঙ্গা উপজেলাবাসীর শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা পাশে আছি। কিন্তু জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে তা প্রতিরোধ করা হবে।'
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসনটি (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) উপজেলা নিয়ে গঠিত। আর নগনরকান্দা ও সালথা উপজেলা ছিল ফরিদপুর-২ আসনে। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, ফরিদপুর-৪ আসনের হামিরদী ও আলগী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করা হয়। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর থেকেই আন্দোলনে নামেন ভাঙ্গাবাসী। দুই ইউনিয়ন ফিরে পেতে টানা কয়েকদিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন ভাঙ্গা উপজেলাবাসী।
এছাড়া, ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ-অবরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনায় রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ভাঙ্গা থানার এসআই হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে এ মামলা করেন। এতে আন্দোলন ঘিরে গঠিত ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের’ প্রধান সমন্বয়ক ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়।
(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫)